শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি: দেশে পাখির বিলুপ্ত ঠেকাতে তাদের নিরাপদ আবাস গড়তে কাজ করছে খুলনার পাইকগাছার পরিবেশবাদী সংগঠন বনবিবি।
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংগঠণটি পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরিতে গাছে গাছে কৃত্রিম বাসা স্থাপনের এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় পাখির অবাধ বিচরণ, নিরাপদ আশ্রয় তৈরি ও বংশবৃদ্ধির লক্ষ্যে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি, কাঠ-টিন ও বাঁশের তৈরি বাসা বসানো হয়েছে। এতে ঝড়, বৃষ্টি, রোদ থেকে বাঁচবে পাখিরা। পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়, রক্ষা ও তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য উঁচু গাছগুলোতে আড়াই হাজার কৃত্রিম বাসা স্থাপন করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষে।
বাসা হিসেবে হাঁড়িগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে বাসার মধ্যে বৃষ্টির পানি ঢুকলেও তা নিচের ছিদ্রগুলো দিয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া হাঁড়ির দুই দিকে বড় দুটি মুখ রাখা হয়েছে। ফলে হাঁড়ির মধ্যে ঢুকতে ও বের হতে পাখিদের কোনো সমস্যা হবে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ আছে। এ আইনে পাখি শিকার, হত্যা, আটক ও কেনা বেচা দন্ডনীয় অপরাধ। পাখি হত্যা করলে যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর কারাদ- এবং ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
পাখিদের নিরাপদ অভয়াশ্রম গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশবাদী বনবিবি সংগঠনের উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে পাখিদের নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থাল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে সময় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি লাগানো হয়। কিন্তু দেখা যায়, ঝড়ের সময় কিছু গাছের ডাল ভেঙ্গে ও ডালে ডালে চাপ লেগে হাঁড়ি ভেঙে পাখির ছানাগুলো নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে। তাই মাটির পাত্রের পাশাপাশি বাঁশ ও কাঠ দিযে তৈরি করা বাসা গাছে বাধা হচ্ছে, যাতে এগুলো নিরাপদ থাকে, ভেঙে না যায়। এই বাসাগুলো বসানোর মাধ্যমে পাখিরা আরও নিরাপদ আবাসস্থাল পাবে। এসব মাটির হাঁড়ি ঝড়-বৃষ্টি ও শীত থেকে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্রজননে পাখিদের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ উদ্যোগ ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাময় ছড়িয়ে দিতে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
গণসচেতনতা কর্মসূচির আওতায় ইতোমধ্যে সংগঠনটি খুলনা জেলা সদর, ডুমরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও তালা উপজেলার বিভিন্ন গাছে পাখির জন্য বাসা স্থাাপন করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার পাঁচশত পাখির জন্য বিভিন্ন প্রকার বাসা স্থাপন করা হয়েছে।
পাখি বাঁচাও, প্রকৃতি বাঁচাও এ শ্লোগানকে সামনে রেখে পাখির নিরাপদ আবাসস্থাল নিশ্চিত করার লক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনবিবি পাইকগাছা উপজেলায় ২০১৬ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। পাখির অভয়ারণ্য তৈরির লক্ষে পাখির সুরক্ষা, নিরাপদ আবাসস্থাল নিশ্চিতে ২০২২ সাল থেকে খুলনা জেলার রেলওয়ে স্কুল মাঠের গাছে ডুমরিয়া উপজেলা চত্ত্বরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গাছে গাছে পাখির বাসার জন্য মাটির পাত্র, কাঠের বাক্স- ঝুড়ি, বাঁশের তৈরি বাসা স্থাাপনসহ সচেতনতামূলক লিফলেট বিতারণ ও উদ্ভুদ্ধকরণ সভা অব্যাহত রয়েছে।
পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনবিবি’র সভাপতি সংবাদকর্মী ও কলামিস্ট প্রকাশ ঘোষ বিধান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে দারুণভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেছে জলবায়ু, আবহাওয়ায়ও নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন মৌসুমী বৈশিষ্ট্যের তারতম্য ঘটেছে। অসময়ে অতিবৃষ্টি, খরা ও ঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাখির প্রধান প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি- জুন পর্যন্ত সময়ে অতি বৃষ্টি ও ঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পাখিদের বাসা বাঁধা, ডিমের সুরক্ষাসহ প্রজনন প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি প্রজনন সুযোগ না পেয়ে বংশ হ্রাসের কারণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অথচ পাখিদের প্রজাতি বৈচিত্র ও সংখ্যার সাম্যাবস্থা ও পরিবেশের ভারসাম্যতা বজায় রাখা অতীব জরুরী। তাই পাখি সংরক্ষণে পরিবর্তিত পরিবেশে তাদের কৃত্রিম বাসা বাঁধার সুযোগ সৃষ্টি করে সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সামাজিক- স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বনবিবি পাইকগাছা উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চল সমূহে গাছে গাছে মাটির পাত্র (কৃত্রিম পাখির বাসা) স্থাপন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, পাখির বসবাস উপযোগী অনুকল পরিবেশ ও বংশ বিস্তারে প্রজনন মৌসুমে পাখিরবাসা স্থাপন একটি ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ। বনবিবির কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পাখি নিধন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহন অব্যাহত রয়েছে।

Discussion about this post