এনামুল হক, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়ার ছয়টি উপজেলাতেই সরকারি নীতিমালা ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে চলছে ইটভাটা।
জেলা জুড়ে ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি। ২১৮টি ইটভাটার মধ্যে ১৫টির ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ২০৩টি ভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে এসব অবৈধ ইট ভাটা চলছে।
অবৈধভাবে ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটা। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হয় গাছের কাঠ। ফসলি জমি নষ্ট করে অধিকাংশ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
এতে বনজ সম্পদ উজাড়ের পাশাপাশি কৃষিজমি নষ্ট, ফসলহানি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে মারাত্মক। স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। আইন অমান্য করে ইটভাটার সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। অনুমোদনহীন এসব অবৈধ ইটভাটায় অভিযান বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ইট ভাটা মালিকরা।
ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা, ভাঙচুর বন্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা বরাবর বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখা বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ করেন তারা। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার নেতারা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সিনিয়র কেমিস্ট মো. হাবিবুল বাসারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ইট ভাটা মালিকরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। আমরা সেটা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দিবো। কোর্টের আদেশ আছে ও আমাদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে যে, অবৈধ কোনো ইট ভাটা থাকবে না। সো অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অব্যাহত অভিযান চলছে। কেউ স্টার্ট করলে আমরা পদক্ষেপ নিবো।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ মৌসুমে আমরা ইট প্রস্তুত করার জন্য শ্রমিকদের অগ্রিম টাকাসহ সরকারি বিধি মোতাবেক ট্রেড লাইসেন্স, বাণিজ্যিক কর, আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধ করে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। এছাড়াও ইটভাটা বন্ধের বিরুদ্ধে আমরা ইট প্রস্তুতকারী মালিকগণ মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং- ১৬০৪৭, ১৬০৪৮, ১৬০৪৯, ১৬০৫০, ১৬০৫১, ১৬০৫২, ১৬০৫৩/২০২৪ এর প্রেক্ষিতে গত ০৪/০৩/২০২৫ তারিখে রিট পিটিশন দাখিল করেছি। যা শুনানী চলমান রয়েছে। কিন্তু মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের পিটিশন নম্বর- ১৩৭০৫/২০২২ এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯/০১/২০০৫ তারিখে প্রদত্ত আদেশ ও ২৪/০২/২০২৫ তারিখে নির্দেশনা অনুযায়ী গত ০৫/০৩/২০২৫ তারিখ হতে কয়েক দিন ধরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ৬টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে সকল ইটভাটা জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়ার নির্দেশে বন্ধ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। আমাদের সমিতির অন্তর্ভূক্ত কুষ্টিয়া জেলায় ১০৬টি ইটভাটায় প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। তাদের আয়ে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। আমরা অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, বিগত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা ২০১৩ ও ২০১৯ সালের কালো আইন করে এই শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছিল। এমতাবস্থায় ইটভাটা বন্ধ হলে ইটভাটা মালিকগণ ব্যাংকের ঋণসহ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হবে। অন্যদিকে শ্রমিকগণ পবিত্র মাহে রমজান মাসে অভাব অনটনে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করবে। ২০১৩ সালে কালো আইন অনুযায়ী ইটভাটা বন্ধ করা হলে দেশে সরকারি, বেসরকারি সকল উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। একই সাথে দেশের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এছাড়াও দেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধ বেড়ে যাবে।
এসব বিষয়গুলো বিবেচনা পূর্বক মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং- ১৬০৪৭, ১৬০৪৮, ১৬০৪৯, ১৬০৫০, ১৬০৫১, ১৬০৫২, ১৬০৫৩/২০২৪ এর প্রেক্ষিতে গত ০৪/০৩/২০২৫ তারিখের রিট পিটিশন দাখিল করেছি। যা শুনানী শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতি মৌসুমে যেনো কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ ইটভাটা বন্ধ না করে, বিগত সরকারের কালো আইন বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকগণ নিজেদের সম্পদ ও জীবন বাঁচাতে আন্দোলনের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলী, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকরা।

Discussion about this post