কুষ্টিয়া জেলার প্রান্তিক মানুষের জীবন মান উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে ‘স্মাইল ইন লাইফ’ নামের সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মো: বাপ্পী কুষ্টিয়ার অসহায় মানুষদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এই সংগঠনটি নিয়ে কাজে করে যাচ্ছেন। আগ্রহী শিক্ষার্থীরাও সমাজসেবায় নিজেকে যুক্ত করছেন এই সংগঠনের মাধ্যমে। সংগঠনটি তার কাজের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা আনতে চান সবসময়।
এই সংগঠনটির মানবিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে অসহায় নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করা, শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি নতুন পোশাক উপহার দেওয়া, শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদ সামগ্রী বিতরণ, গৃহহীনদের ঘর উপহার দেওয়া, সাধারণ মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন মাঠ, মসজিদ-মন্দির, মাদরাসা, রাস্তার মোড়ে ও কবরস্থান নলকূপ স্থাপন ইত্যাদি। সব মিলিয়ে সামাজিক সংগঠনটি চেষ্টা করে যাচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা বাপ্পী বলেন, এ পর্যন্ত দুইশটিরও বেশি কার্যক্রম আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আরও বেশ কিছু ইভেন্ট চলমান আছে। আমাদের সংগঠনের সব সদস্যই শিক্ষার্থী। আমাদের এসব ভালো কাজে সহায়তার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সমাজের বিত্তবানদের অনেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করে থাকেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন পূরণই আমাদের কাজের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি বাপ্পী একদিকে যেমন এলাকার তরুণ যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণে ভূমিকার রাখছে, ঠিক তেমনি এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে এলাকার কিছু উদ্যমী তরুণরা। এই কাজে ‘স্মাইল ইন লাইফ’ সংগঠনটিকে সহযোগিতা করছে নারী উদ্যোগ কেন্দ্রসহ বেশকিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সংগঠনের সদস্যরাও নিজেদের অনুদানের মাধ্যমে সমাজের এই উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।
সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জানা যায়, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পরিবারকে ‘স্মাইল ইন লাইফ’ এর পক্ষ থেকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ, এক হাজার মানুষের মধ্যে হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ, শতাধিক করোনায় আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার করার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছে সংগঠনটি। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলার ২০০টি পরিবারের মধ্যে ফাস্টএইড বক্সও উপহার দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, কর্মক্ষম মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টির জন্য হাঁস-মুরগি বিতরণ, ছাগল বিতরণ, ভ্যান-রিকশা প্রদান, সেলাই মেশিন প্রদানের কাজও করেছে ‘স্মাইল ইন লাইফ’ সংগঠনটি।
বারুইপাড়া ইউনিয়নের কবরবাড়ীয়া এলাকার বৃদ্ধা রোমেলা খাতুন বলেন, ‘একটি নলকূপ স্থাপন করতে অনেক টাকা দরকার হয়। আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় এতোদিন বাড়ী থেকে দুরে ক্যানেলের পানি এনে আবার অন্যের বাড়ি থেকে নলকূপের পানি এনে পান করতে হয়েছে। আমার কষ্ট দুর হয়েছে। একটি নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছে। আমি খুবই খুশী এতে আমার অনেক উপকারে আসলো।
সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ত শিশির ও বিপুল হোসেন জানান,
‘অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকে, সেখানে তাদের প্রতিদিনের নিরাপদ পানির সরবরাহে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস চলমান থাকবে।’
‘স্মাইল ইন লাইফ’ প্রজেক্ট উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায়, আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষদের দিকে, যারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছিল বিশুদ্ধ পানির অভাবে, যারা দূষিত পানি পান করে অসুস্থ হচ্ছিলেন, কাউকে পানি আনতে যেতে হচ্ছিল অন্য গ্রামে, কোথাও কয়েকটি বাড়ি খুঁজলেও একটি নলকূপ নেই। এতিমখানার বাচ্চাদের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বিশুদ্ধ খাবার পানির, মসজিদের মুসল্লিদের অজু করার ও খাবার পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাপ্পী বলেন, যখন কাউকে সহযোগিতা করতে পারি, তখন মনের ভেতরে একটা ভালোলাগা কাজ করে। এই অনুভূতি আসলে কাউকে বোঝানোর মতো নয়। তখন আমার কাছে মনে হয় এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, বড় সাফল্য। একটা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে মনে হয় আমি পুরো বিশ্বকে জয় করে ফেলেছি। আর মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস থেকেই এই কাজগুলো করে আসছি। ভবিষ্যতেও করে যেতে চাই।
বাপ্পী জানান, অদম্য মেধাবী কাজপাগল তরুণের মাধ্যমে অনেক অসহায় গরিব মানুষ এখন আলোর পথের যাত্রী। এদের নিয়ে এদের জন্যই আগামী দিনে একটি কম্পিটার ইনস্টিটিউট ও একটি প্রাথমিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ৩০ অক্টোবর ২০২৩