মেহেরপুর প্রতিনিধি: দীর্ঘ ২১ বছর আগে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াই কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাঁশ বাগানে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। জন্ম নেয় ছেলে সন্তান। পিতৃত্বের পরিচয় চাইতে করা হয় মারধর। হুমকি ধামকি দিয়ে করা হয় গ্রাম ছাড়া। স্বামী ও সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় ফিরে পেতে করেছেন আদালতে মামলা।
আর ধর্ষকের বাবা বলছেন সবকিছুই উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ টেস্ট এর পরীক্ষা চাওয়া হবে বলছে পুলিশ।
২০০৩ সালে ক্ষমতাশীন সাত্তার মেম্বারের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতেন এক মেয়ে । বাড়ির বড়ছেলের চোখে ধরে ঝিয়ের কাজ করা মেয়েকে ,এক সময় বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে বাড়ির বড়ছেলে রাজি না হওয়াই কাজ শেষে সন্ধায় কাজ বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী বাঁশ বাগানে জোরপূর্বক ধর্ষণ। ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয় একটি ছেলে সন্তান। স্বামী ও সন্তানের পিতৃত্বের পরিচয় ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী।
বলছিলাম মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পুরাতন মটমুড়ার নিম্ন পরিবারের চায়না খাতুন ও তার ছেলে রিমনের কথা।
জানা গেছে, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার পুরাতন মটমুড়া গ্রামের তৎকালীন ইউপি মেম্বার আব্দুল সাত্তারের বাড়িতে ঝি (কাজের বুয়া) হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেও চায়না খাতুন। কাজ করার সময় বিভিন্ন সময় তার ছেলে রিপন আলী বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।
রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক হাত পা বেঁধে পার্শ্ববর্তী বাঁশ বাগানে ধর্ষণ করে। তৎকালীন সময়ে প্রভাবশালী ইউপি সদস্য হওয়ায় আব্দুল সাত্তার এর ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি এলাকার কেউ। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর সন্তানকে সাথে নিয়ে চায়না খাতুন তার পিতৃত্ব পরিচয় চাইতে গেলে সাত্তার মেম্বারের লোকজন চুল ধরে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করে দেন। শিশু রিমন আলীকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে রিপন ও তার বাহিনীরা প্রায় সময় বাড়ির উপর এসে অসৎ উদ্দেশ্যে হামলা চালাচ্ছে। এর আগেও তাদের অত্যাচারে দীর্ঘদিন কুষ্টিয়া ও ঢাকাতে বিভিন্ন বাসা বাড়ি, খাবার হোটেল ও গার্মেন্টসের চাকরি করেছি।
চাইনা খাতুন জানান,রিমন গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল কলেজে ভর্তির সময় পিতৃ পরিচয় দিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পিতৃ পরিচয় না থাকার কারণে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে পারছেন নারী, রিমন। ফলে সরকারি বিভিন্ন চাকরিতে আবেদনও করতে পারছেন না। অনেকেই রিমনকে জারজ সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাড়িতে এসে বেশ কয়েকদিন না খেয়ে চুপচাপ বসে থাকে। বর্তমানে রিপন বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। ছেলে তার বাবার পিতৃ পরিচয় চাইতে গেলে পরিবারের লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে বলে জানান চায়না খাতুন।
রিমন জানান,বাবার পরিচয় না থাকায় অনেকে আমাকে জারজ সন্তান বলে বাজে মন্তব্য করে। একদিকে পিতৃ পরিচয় না থাকাই ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে আবেদন করতেও পারছিনা ঠিকমত। সবার তো বাবা আছে, আদর পাই, ভালোবাসা পাই, কিন্তু আমি বঞ্চিত। আমি আমার বাবার পরিচয় ফিরে পেতে চাই বলে জানান রিপনের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, বিষয়টি নিয়ে রিপন ও তার পরিবারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় মাত্র ২৭ হাজার টাকা দিয়ে গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা করে দেন। পরিবারটির ওপরে বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিতে থাকেন বলে জানান এলাকাবাসীরা
এ বিষয়ে রিপন আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
মেহেরপুর গাংনী উজজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল সাত্তার মেম্বার জানান, সন্তান জন্ম দানের বিষয়ে দীর্ঘ ২১ বছরে এখন পর্যন্ত আমাকে কেউ বিষয়টি জানাননি। এক সময় ইউনিয়ন পরিষদে একটি মামলা দিয়েছিলেন চায়না খাতুনের মা। সে সময় সন্তানকে নিজের দাবি করেন চায়না খাতুন। এখন কারা ইন্ধন দিয়েছেন বা তারা নিজেরাই মামলা করেছেন কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নেই বলে জানান রিপনের বাবা মটমুড়া ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান
তবে আদালতের মামলা তারিখ অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের মামলার তারিখে অনেক পার্থক্য রয়েছে বলে জানা যায়।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্পের আইসি সইবুর রহমান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আবেদন চাইবো। ওই ভুক্তভোগী পরিবার যেন তাদের যথাযথ আইনি সহযোগিতা পায় সে ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারীডাঙ্গা ক্যাম্পের আইসি।
এহ/20/10/24/ দেশ তথ্য
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post