নেছারাবাদ(পিরোজপুর)প্রতিনিধি: শাহিদা বেগম, বয়স ষাট বছর। শরীরে রোগ শোক বাসা বাধায় ক্রমেই নূয্য হয়ে পড়ছেন। স্বামী আব্দুল মজিদ মারা গেছেন অনেক বছর হয়েছে।
একটি মাত্র মেয়ে কহিনূর(২৫)। তার ঘরেও রয়েছে অবুঝ একটি মেয়ে শিশু। বর্তমানে শাহিদার মানষিক ভারসাম্য মেয়ে কহিনূর আবার গর্ভবতী। ঠিকমত খোজ রাখেনা মেয়ে জামাই। বৃদ্ধ মা শাহিদা তাকে নিয়ে বসবাস করেন নদীর পাড়ে স্বামীর ভিটায় তৈরীকৃত একটি খুপড়ি ঘরে। সেখানে অনাহারে অর্ধাহারে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। তারা কখনো না খেয়ে থাকলেও হাত পাতেনা কারো কাছে। অনুগ্রহ করে কেউ যদি খাবার দেয় তা দিয়েই কোনমতে চলে তাদের পেট। বাশের খুটি,হোগলাপাতা আর পলিথিনের বেড়ায় মোড়ানো সেই খুপড়ি ঘরটিও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর আঘাতে ঘুড়িয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ভেষে গেছে ঘরে থাকা কেজি তিনেক চাল,লবন আর কেরোসিন। বন্যার পরে প্রতিবেশিদের সহায়তায় বৃদ্ধ শাহিদা সেই খুপড়ি ঘরটি কোনমতে দাড় করিয়ে বসবাস করছেন বিদঘুটে অন্ধকারে। কেরোসিনের অভাবে রাতের অন্ধকারে ঠিকমত জ্বলেনা কুপি বাতিটিও।
এভাবেই চলছে তাদের মানবেতর জীবন। বন্যার পরে সাহয্য বলতে ইউপি চেয়ারম্যানের দেয়া পাচ কেজি চাল ছাড়া আর কিছুই জোটেনি বৃদ্ধ শাহিদা বেগমের কপালে। শাহিদার বাড়ী নেছারাবাদ উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের কামারকাঠি ১নং ওয়ার্ডে।
শাহিদা বেগম বলেন, এই নদীর পাড়ে আমার স্বামীর ভিটা। তাই মেয়েসহ নাতি নিয়ে এখানে পড়ে আছি। মেয়ে বর্তমানে অসুস্থ। শরীরের অসুখে এখন কাজকর্ম করতে খুব কষ্ট হয়। বন্যায় আমার বসাবসরত খুপড়ি ঘরটি ভেষে গেছে। বন্যার দিন আশ্রয়নে ছিলাম। সকালে এসে দেখি ঘরটি পড়ে গেছে। ঘরে লবন পর্যন্ত নেই। কোনমতে এই ঘরে আছি। বাতাস আসলেই ঘরের বাশের খুটি নড়বড় করে। এখন একটুখানি বৃষ্টি হলেও গড়িয়ে পড়ে পানি। শরীর একটু ভাল থাকলে কাজ করতে পারি। অন্যাথায় না খেয়ে থাকতে হয়। সাহয্য বলতে বন্যার পরে পাচ কেজি চাল পেয়েছিলাম। কেউ দয়া করে একটু থাকার মত ঘর তৈরী করে দিলে মেয়ে নাতীকে রেখে নিরাপদে কবরে যাইতে পারতাম।
প্রতিবেশি তাসলিমা বেগম বলেন, এই যায়গার মধ্য যত ঘর আছে তাদের মধ্য শাহিদা চাচীরা খুবই কষ্টের ভিতরে আছে। ওদের র্দুদশা দেখে আমাদের কান্না আসে। বন্যায় ওদের থাকার খুপড়ি ঘরটি পড়ে গেছে। আমরা সবাই মিলে পূনরায় বাশ পলিথিন দিয়ে ঘরটি তুলে দিয়েছি। আমরা যতটুকু পারি ওদের দেই। তাতে ওদের ক্ষিদে মিটেনা। ওদের না আছে একটু ঘর না আছে খাবার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: সাহাবুদ্দীন বলেন, আসলেই ওরা খুব কষ্টে আছে। ওই বৃদ্ধ চাচীর একটি মেয়ে তার ঘরে আবার একটি বাচ্চা। তারা খুবই মানবেতর জীবন যাবন করছে। ইউপি সদস্য হিসেবে যা পারি দেখি। আসলে তাতে ওদের কিছুই হয়না। একবেলা খাবার দেয়া যায়। কিন্তু ওদের ঘরটি মোটেও ভাল নয়। কোন সহৃদয় ব্যাক্তির নজরে যদি ওরা পড়ত। তাহলে ওরা একটু আশ্রয়ের ঘর পেত।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান জানান, এ উপজেলা গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি কোন ঘর খালি থাকা স্বত্তে বৃদ্ধাকে পূর্নবাসন করা হবে। আমরা খোজ নিয়ে প্রসাশনের পক্ষে যতটুকু সম্ভব তার জন্য করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post