নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল মজিদ বাবলু হচ্ছেন নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। যৌবন কাল থেকেই বিএনপির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা আব্দুল মজিদ বাবলু। ছিলেন বিএনপি’র বিভিন্ন ইউনিটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও। বিএনপি ও চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করেছেন তিনি। বসন্তের কোকিলের মতো সুবিধা গ্রহণের জন্য বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশ করেছেন এই নেতা। অন্যদিকে তার আপন ছোট ভাই আব্দুল মাজেদ এখনো বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আব্দুল মজিদ বাবলু ২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে সমর্থন নিয়ে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। তিনি ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আব্দুল মজিদ বাবলু ২০১৬ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া সদর থানা বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও বটতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুবিধাবাদী এই নেতা নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ২০১৭ সালে সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তার ছোট ভাই আব্দুল মাজেদ সদর থানা যুবদলের বর্তমান আহবায়ক। বসন্তের কোকিল খ্যাত এই নেতা আসন্ন বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে জাহির করেছেন এবং মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসন্ন বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে তিনি ইচ্ছা পোষণ করেননি এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে এ বিষয়ে তিনি কোন যোগাযোগও করেননি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বটতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী নেতৃবৃন্দের সর্বসম্মতিক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের কাছে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী হিসেবে ১০জনের নামের সুপারিশকৃত তালিকা পাঠানো হয়। সেই তালিকায় ছিল না বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল মজিদ বাবলুর নাম। হঠাৎই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করে সেটি পূরণ পূর্বক জমাও দিয়েছেন তিনি। এমনকি নিজে যদি কোনভাবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন সেজন্য তিনি তার ছেলে জনিকে দিয়েও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন পত্র দাখিল করিয়েছেন।
এদিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাবেক বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু পুনরায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় জনমনে নানান প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কি কারনে, কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বসন্তের কোকিল সাবেক বিএনপি নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী আব্দুল মজিদ বাবলু পুনরায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন??? তাহলে কি এই বাবলু আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় থেকে বিএনপি ও চারদলীয় জোটের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে মাঠে নেমেছেন?? এই প্রশ্নও এখন মানুষের মুখে মুখে। শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আব্দুল মজিদ বাবলুর মত অনুপ্রবেশকারী ও বসন্তের কোকিলদের যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আনতে জোর দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নবাসী ও তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা।
বটতৈল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম বলেন, নৌকার পরাজয় ঘটাতে, নৌকার ভরাডুবি করতে তারা মাঠে নেমেছে। অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে দলে যোগ দিলেও তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ বিপদে আছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, আব্দুল মজিদ বাবলু আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন ঠিকই তবে তিনি মুজিব আদর্শের সৈনিক হতে পারেননি। দল থেকে তাকে এখনো অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। যেহেতু তিনি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন তাতে মনে হচ্ছে বিএনপি জামায়েতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেই হোক আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগ করতে আসলে আমরা লক্ষ্য রাখি। যদি কেউ আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় তা কোনদিন পারবে না। আওয়ামী লীগ তার নিজস্ব গতিতে চলে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, সাথে আছেন আমাদের নেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি। যারা আওয়ামী লীগের বাইরে বা নৌকার বাইরে কাজ করবে তাদের আওয়ামী লীগ থেকে কোন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দূরে থাক, আওয়ামী লীগ করার সুযোগ আর পাবে না। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি কিছু করে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনুপ্রবেশকারী বলে একটা কথা আছে। বিএনপি’র আমলে যারা সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের আমলে এসেও সুযোগ-সুবিধা নিতে চান। আমরা সজাগ আছি, সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আব্দুল মজিদ বাবুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমার কোন পদ পদবী নাই। আমি দলে যোগ দিয়েছি। সরকার অনুমতি দিয়েছে তাই দাঁড়িয়েছি। আমি যদি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই তাহলে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার জন্য যা যা করার দরকার আমি করব।

Discussion about this post