নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ “ভোট নৌকা বাদে কোথাও যাবে না। হরিপুর ইউনিয়নে বসবাস করতে হলে ভোট নৌকাতেই দিতে হবে। আগ বাড়িয়ে কোন রকম রং কিংবা সিদুর নিতে যায়েন না। আপনাদের কেউই রক্ষা করতে পারবে না। সকলের তালিকা করা হচ্ছে, ৫ তারিখে নির্বাচনের পরে দেখা হবে। কোন সুযোগ সুবিধা আর পাবেন না।” বলে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিবাসীকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল। ৫ম ধাপে ৫ জানুয়ারী হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নিবাচনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা প্রতিকের নির্বাচনী প্রচারণামুলক সভায় এ ধরণের বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করলে মুহুর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে ভোটের পরিবেশ ও হামলার শঙ্কায় রয়েছে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীরা। ৩মিনিট ৫৭ সেকেন্ডর ভিডিওর মাধ্যমে দেখা যায়, “ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শম্পা মাহমুদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সভা করছেন। সেখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বক্তব্য দেন।” মিলন মন্ডল তার বক্তব্যে বলেন, “নৌকা নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে আসবেন না। আওয়ামী লীগের রক্তের সাথে কেউ বেইমানী করবে না। কোনরকম আওয়ামী লীগের সাথে বেয়াদবী সহ্য করা হবে না। আমি মনে করি আপনাদের দাড়ানো (ভোটে) ঠিক হয় নাই। হরিপুর ইউনিয়ন একমাত্র হানিফ ভাই এর উন্নয়নের ইউনিয়ন। আপনারা কি দিয়েছে? যে আপনারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাড়ান? আনাদের দেওয়ার ক্ষমতা নাই, দিতেও পারবেন না। আমরা বলতে চাই, আপনারা যারা হরিপুরে বসবাস করছেন, নৌকার বিরোধীতা করছেন, শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন, এটাই আপনাদের বড় ভাগ্যের বিষয়। কারণ আওয়ামী লীগ অত্যাচারিতে বিশ্বাসী না। আপনারা শুধু ইউনিয়নের সুবিধা নিবেন। আর জনগনকে ধোকা দিয়ে ভোট নিবেন।” তিনি হঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমি ইউনিয়ন বাসীকে পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, ৫ তারিখে নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে, আওয়ামী লীগ সরকার কিন্তু শেষ হবে না। আমরা কিন্তু প্রত্যেক মানুষকে চিহ্নিত করবো।”
তিনি আরো বলেন, “এমনো হতে পারে সরকারের যে উন্নয়ন হয়েছে আপনাদের ভোগ করতে দিবো না। আপনারা নৌকার বাইরে যায়েন না, আপনাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আপনাদের বিপদে কেউ পাশে দাড়াতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “আমি সাধারন মানুষকে চ্যালেঞ্জ করছি যদি কেউ আপনাদের উপকারে আসতে পারে তাহলে তাকে ভোট দিবেন। আপনাদের চেয়ারম্যান হবে কলাগাছ মার্কা।”
এদিকে এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শঙ্কায় রয়েছে ভোটাররা ভোটের পরিবেশ নিয়েও।
হরিপুর ইউনিয়নের কয়েকজন সাধারন ভোটারদের সাথে এ ব্যপারে কথা বলে তারা জানায়, আমরা শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট দিতে চাই। নিজেদের ভোট পছন্দ মতো প্রার্থীকে দিতে চাই। ভোট সুষ্টু হবে কিনা এটাই এখন চিন্তার বিষয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন- “আমরা হরিপুরের মানুষ রোহিঙ্গা না।” “লাখো শহীদের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি।” “তাই নাকি ভয় করে আমাদের” ।
এ ব্যপারে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কারশেদ আলম বলেন, “নির্বাচনের আগে এ ধরণের বক্তব্য আমাদের কাম্য নয়। এতে সাধারন মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আতংকিত হতে পারেন।” হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী জানান, “ভোট সাধারণ নাগরিকদের অধিকার। নির্বাচনী প্রচারণায় এ ধরনের বক্তব্য ভোটারদের প্রভাবিত করে। নির্বাচনের সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশ যেন বজায় থাকে এজন্য নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্শন করেছেন এই প্রার্থী।”

Discussion about this post