কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় দিতীয় দিনের মত চলছে তদন্ত কাজ। শনিবার ঘটনাস্থল দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শেখ হাসিনা হল কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি নির্যাতিতা শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী’কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একই ভাবে এদিন তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হন অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তাবাস্সুম মীম। সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি কয়েক দফা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করেন অভিযুক্তদের।
তবে তদন্ত কমিটির সাথে কথা বলে বের হওয়ার সময় ছাত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরার সাথে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কোন ভাবেই কথা বলতে রাজি হননি। এসময় অন্তরা যা বল্লেন- ‘আ আ তদন্ত করা সাপেক্ষে আসলে আমি এসম্পর্কে কিছুই বলতে চাচিছ না, আমার সাথে তদন্ত কমিটির কথা হয়েছে, আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি, ৪পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য জমা নিয়েছে, ঘটনা সম্পর্কে আমি এখন কিছুই বলতে চাচ্ছিনা, তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমেই আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন। এটা এটা আপনারা তদন্ত করলেই আপনারা সবকিছু জানতে পারবেন, তদন্তের মধ্যদিয়ে যা আসবে সেখানে তো সত্যিটা বেরিয়ে আসবে, স্যার ম্যাডামরা যা করবেন সেখানে তো সবকিছু জানা যাবে, তাদের উপর ভরসা করেই তো দেয়া হয়েছে। উনারা যেটা দিবে আপনারা ওখান থেকেই সবকিছু জানতে পারবেন। এসময় তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোন সত্যতা আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে- অন্তরা ‘নো কমেন্টস’ উক্তিটি বলেই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
একই ভাবে দেশরতœ সেখ হাসিনা হল শাখার ছাত্রলীগ নেত্রী তাবাসসুম তদন্ত শেষে বের হলে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি এবং দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘কি হয়েছে না হয়েছে সেটা আমি তদন্ত কমিটির কাছে বলে এসেছি। আপনারা ওখান থেকে জেনে নিন’।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ২য় দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কমিটির প্রধান প্রফেসর ড. রেবা মন্ডল তদন্ত কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাক্ষ্য স্বাক্ষাৎ নিচ্ছি, আমরা তদন্তের স্বার্থে ঠিক যে কাজগুলি করা দরকার সেগুলি করছি। তাছাড়া একটা ঘটনার তদন্ত চলাকালে আমাদের অনেক জিজ্ঞাসাবাদ থাকতে পারে, কিন্তু সুষ্ঠ তদন্ত সম্পন্নের স্বার্থে মাঝপথে তদন্ত বিষয় সম্পর্কে কিছুই বলা যাবে না। তবে তদন্তকাজে আমাদের অনেকখানিই অগ্রগতি হয়েছে। আজকে আমরা ২য় দিনের কাজ করলাম, গতকালকেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কাজ করেছি। এমুহুর্তে ঠিক কতজনকে অভিযুক্ত হিসেবে সনাক্ত করতে পেরেছি সেবিষয়ে কিছু বলা যাবে না। ঘটনার পারিপার্শ্বিক তথ্য উপাত্তের সূত্র হিসেবে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে হল প্রভোষ্টকে পত্র প্রেরণ করেছি, কিন্তু সেটা এখনও হল কর্তৃপক্ষ আমাদের দিতে পারেননি। উনারা বলেছেন যে, আইসিটি সেল থেকে টেকনিশিয়ান নিয়ে এসে ফুটেজ সংগ্রহ করে দিবেন। সেক্ষেত্রে কিছু ডিভাইস প্রয়োজন হতে পারে বলে হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই সব ডিভাইস কেনার জন্য টাকাও বরাদ্দ হয়েছে বলে জানি, আশা করছি হয়তো দুই একদিনের মধ্যেই এসব ডকুমেন্টস আমাদের হাতে চলে আসবে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত কাজ শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারবো’।
উল্লেখ্য গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা হলের গণরুমে রাতভর ১ম বর্ষেও এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এঘটনায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতে, ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ তদন্তের লক্ষে বিচার বিভাগীয় তদন্ত গঠন করা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২০২৩
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post