আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক: সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেট ইসরাইলি হামলার কড়াপ্রতিশোধ নেবে বলে ইরান ছাপ জানিয়ে দিয়েছে। ইরানের এই হামলার আশঙ্কায় রীতিমতো ভয়ে আছে ইসরাইল। ইতোমধ্যেই কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে গেছে তেলআবিব। জোরদার করা হয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার থেকে বাতিল করা হয়েছে সেনাবাহিনীর ছুটি। বন্ধ করা হয়েছে দেশটির জিপিএস সেবা। যুদ্ধের শঙ্কায় পূর্বের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খোলার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। সূত্র দ্যা গার্ডিয়ান, আল মায়াদিন।
১ এপ্রিল, ২০২৪ ইসরাইল হঠাৎই এক দুঃসাহসী হামলা চালায় সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের দূতাবাসে। এই হামলায় ইরানের একজন প্রথম সারির সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং জেনারেল মুহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমী-সহ ৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।এই ঘটনার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলি খামেনেই বলেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়ে যেভাবে ইরানের উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে, তার জন্য ইসরাইল আপশোস করতে বাধ্য হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিও বলেছেন, ইরান অবশ্যই এই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ গ্রহণ করবে।
না, ইরান এখনও কোনও হামলা চালায়নি। কবে ইরান প্রতিশোধ নেবে, তাও কিন্তু স্পষ্ট নয়। কিন্তু হলে কী হবে? ইরান কি আসলেই ইসরাইলে হামলা করবে, এই আতঙ্ক ইসরাইলের সরকার, সাধারণ মানুষ, মিলিটারি কর্মকর্তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্কের চোটে ইসরাইলি জনসাধারণ তাদের প্রত্যেকের ঘরের বেসমেন্টে যে যুদ্ধকালীন সেল্টার রয়েছে, তাতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশিরভাগ সময় ঢুকে থাকছে।
ইরানের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণায় ভীত ইসরাইল প্রথমে যে পদক্ষেপটি নিয়েছে, তা হল বিভিন্ন দেশে তাদের দূতাবাসগুলি খালি করে ফেলেছে। সেখানকার কর্মচারী ও তাদের পরিবারসমূহকে তারা অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। যে ইসরাইলি দূতাবাসগুলি ইরানি আক্রমণের ভয়ে খালি করে দেওয়া হয়েছে সেগুলি হল মিশর, মরক্কো, জর্ডান, বাহরাইন এবং তুরস্কে।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এতটাই ভয় পেয়েছে যে, তারা দোকান, মল ও ডিপার্টমেন্টাল স্টলগুলিতে তাদের জরুরি জিনিসপত্র কেনার জন্য লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ এবং হুথি আনসারুল্লাহ-র হামলাতেই ইসরাইল বিপর্যস্ত হয়ে রয়েছে। তার উপর যদি ইরান সরাসরি হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি গুরুতর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলির ধারণা, ইরানের হাতেও পারমাণবিক বোমা রয়েছে। আর রয়েছে ব্যালেস্টিক মিসাইল, যা ইসরাইলের অভ্যন্তরে যেকোনও টার্গেটে হামলা চালাবার ক্ষমতা রাখে। অবশ্য পারমাণবিক বোমা ইসরাইলের হাতেও রয়েছে। কিন্তু ইরানের হাতে পারমাণবিক বোমা থাকলে তা অবশ্যই ইসরাইলকে নিবৃত্ত করবে, কোনও রকমের হঠকারিতা থেকে।
এ দিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ডেনিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পালটা আক্রমণের আশঙ্কায় আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি এবং আমাদের বিমানবাহিনীকে সদা প্রস্তুত রেখেছি। যাতে তারাও পালটা আক্রমণ শানাতে পারে।
ইসরাইলের অভ্যন্তরে ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর পর আর হামলা হয়নি। কিন্তু সিরিয়ার দূতাবাস হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান যদি ইসরাইলকে আক্রমণ করে, তাহলে তা পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।