আধুনিক প্রযুক্তি যেমন দিয়েছে মানবতার চরম উৎকর্ষতা; ঠিক তেমনি মানব সভ্যতাকা ধ্বংসযজ্ঞ করার দিয়েছে বহু মারন্ত্রাস্ত্র ৷ বিশ্ব এখন অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের দোশররা তাদের তাবৎ বিধংসী অস্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখতে নমুনা পাঠায় গাজায় ৷ নতুন কোন অস্ত্র তৈরী হলে পরীক্ষা কেন্দ্র হলো পৃথিবীর একটি চরম ভাগ্যাহত জাতি ফিলিস্তিন৷ আর ইসরাইলি সকল প্রকার অস্ত্রের টেষ্ট করার জনবসতি হলো ফিলিস্তিনিরা। করণ, ফিলিস্তিনিদের রক্তের কালার লাল না!
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গাজায় ২০ হাজারের ওপর বেসামরিক মানুষ নিহত ও ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছে। এই নারকীয় আগ্রাসনে ইসরায়েল কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে, তার একটি নমুনা প্রকাশ করতে গত ২২ অক্টোবর একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ইসরায়েলের ‘ম্যাগলান কমান্ডো ইউনিট’ একটি বিশেষ প্রযুক্তিসম্পন্ন মর্টার গোলা ব্যবহার করে যার নাম ‘আয়রন স্টিং। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্রান্টজ একে প্রত্যন্ত ও নগরাঞ্চলে নিখুঁতভাবে নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেন। হায়েনারা ব্যবহার করেছে নিষিদ্ধ সাদা ফসফরাস।
গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর ব্যবহার করা এই আয়রন স্টিং অস্ত্র ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভা-ারে যুক্ত হয় খুব বেশি দিন আগে নয়। এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘এলবিট সিস্টেমস’ ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে কাজে যুক্ত হওয়ার আগে ২০২১ সালের মার্চে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের জনসংযোগ পাতায় অস্ত্রটির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। সারা বিশ্বে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাণিজ্যে তালিকায় নাম রয়েছে ইসরায়েলের। ইসরায়েলের ইহুদিবাদী প্রশাসন সর্বাধুনিক ও মারণঘাতী অস্ত্রগুলো প্রায়ই ফিলিস্তিনের ওপর ব্যবহার করে। ব্যাপারটি অনেকটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ফিলিস্তিনিদের ওপর মারণঘাতী অস্ত্রে সফল ব্যবহার হলে তার চাহিদা বহির্বিশ্বে বেড়ে যায়। সফল পরীক্ষার পর অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বের বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। ‘দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি’ বইয়ের লেখক অ্যান্টনি লোওয়েনস্টেইন বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গাজায় প্রতিটি যুদ্ধে ইসরায়েল যেসব অস্ত্র ও নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে সেগুলো পরে বাজারজাত হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক বিক্রি হয়েছে।
২০১৪ সালের তৃতীয় গাজা যুদ্ধে ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় রাফাহ ক্রসিংয়ের কাছে একটি ট্যাক্সিতে। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে একটি ট্যাক্সির ছয়জন যাত্রীকে শিরচ্ছেদ করে এবং হত্যা করে। মূলত স্পইক ড্রোন রকেট দিয়ে চালানো হয় এই হামলা। এ ছাড়া এটি আহতদের ব্যাপক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, ওই যুদ্ধের পর ড্রোনসমেত সম্পূর্ণ স্পইক রকেট ব্যবস্থার চাহিদা বিশ্বেব্যাপী বেড়ে যায়। ‘হিরন টিপি এইটান’ ইসরায়েলের বৃহত্তম মানববিহীন ড্রোন (ইউএভি) যা ২০০৭ সালে প্রথম ব্যবহার করা হয়। এটি ৪০ ঘণ্টার ওপরে আকাশে উড়তে পারে এবং চারটি স্পইক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। ইসরায়েল ২০০৮-২০০৯ সালে গাজায় ‘অপারেশন কাস্ট লেড’ পরিচালনায় প্রথম ব্যবহার করে এই অস্ত্র। পরে ২০০৮-২০১১ সালে কমপক্ষে ১০টি দেশ থেকে এর অস্ত্রের জন্য ক্রয়াদেশ পায় ইসরায়েল। এমনকি ভারতও এই মডেলের শতাধিক ইউএভি ক্রয় করে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post