শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট:
বর্তমান দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে যেমন পড়েছে, তেমনি পড়ছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের কৃষি শ্রমিকের বাজারে।
এক বোঝা পঁচানো পাট ধোয়ার কাজ করছে মাত্র ১০ টাকায়।
এভাবে সারাদিন একজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করতে পারে ১৫-২০ বোঝা পাট ধোয়ার কাজ। এতে আয় হয় মাত্র ১৫০ – ২০০ টাকা। যাহা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে নুন আনতে পান্থা ফুরানোর অবস্থা। এনজিও’র নেয়া ঋনের সাপ্তাহিক কিস্তির টাকায় উঠেনা।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্বকদমা গ্রাম।
এই গ্রামের বড়দল বিলে পাট ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে বেশকিছু নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের। এদের মধ্যে একজন নারী শ্রমিক গিরিবালা(৪৫)। তিনি জানান এখানে তারা পাট ধোয়ার ( পাটখড়ি হতে আঁশ ছাড়ানো) কাজ করছেন চুক্তি ভিত্তিতে। প্রতি আঁটি ( পাটের বোঝা) হতে আঁশ ছড়ালে দেয়া হবে ১০ টাকা।
এভাবে সকাল হতে বিকাল পর্যন্ত ৮-১০ ঘন্টায় ১৫-২০টি আঁটি বা বোঝা পাট ধোয়া যায়। মানে পাটখড়ি হতে আঁশ ছাড়ানো যায়। এতে দৈনিক আয় হয় ১৫০ – ২০০ টাকা।
কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে কৃষি শ্রমের বাজারে তেমন কাজ নেই। সকালে প্রতিদিন ১৫-২০ জন নারী পুরুষ শ্রমিক কাজের জন্য আসেন। তারা সবাই কাজ করতে চায়।
তাই সকলকে পাট ধোয়ার কাজে লাগিয়ে দিয়েছি। এখানে কৃষি শ্রমিক পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। তাই কৃষি শ্রমের বাজার খুব সস্তা। এটা গত বছরও ছিল না। গত বছর ৫০০ টাকা হাজিরা দিয়ে শ্রমিক নিতে হয়েছে।
এ বছর রাজনৈতিক অস্তিরতার কারণে বেশিরভাগ গামেন্টর্স কারখানা বন্ধ। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের কৃষিশ্রমিকরা দক্ষিনাঞ্চলে কাজের সন্ধানে যেতে পারেনি।
তাই গ্রামে কাজের তুলনায় শ্রমিক অনেক বেশী। আবার হাজিরা দিয়ে পাট ধুয়ে বাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠবে না। এক মন পাট উৎপাদনে খরচ প্রায় দুই হাজার পাঁচ শত টাকা। বাজারে বর্তমান পাট বিক্রি হচ্ছে ২৪ শত হতে ২৫ শত টাকা। যাহা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম। সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ভেলাগুড়ি ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ শফিযার রহমান জানান, পাটের দাম মন প্রতি তিন হাজার টাকার বেশী হলে তবেই কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারবে। তার কম হলে উৎপাদন খরচ উঠবে না। পাটের জমি তৈরী, পাট বুনানো, পরিচর্যা, কাটা, পচাঁনো, আঁশ ছড়ানো ও শুকানো এক রকম পক্রিয়ার মধ্যে যেতে হয়। স্থানীয় বাজারে পাটের তেমন চাহিদা নেই। কেনা বেচা হচ্ছে স্থানীয় বাজারে স্থানীয় মজুরদার ব্যবসায়ীদের কাছে। বিদেশে রফতানি হলে তবেই পাটের বাজার উর্ধ্বমুখী হতে পারে। পাট ব্যবসায়ী রমজান আলী জামান, সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে ডলারের তীব্রসংকট রয়েছে। যার প্রভাব দেশের পড়েছে। ভারত এদেশের পাটের বড় ক্রেতা। ভারতও পাট উৎপাদনকরে আসছে। ভারত পাট না কিনলে বাজারে ধস নেমে যাবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ৫১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছিল। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪১২ হেক্টরে। এই পরিসংখ্যান গত ১০ বছরে নিয়ে গেলে দেখা যায়, এই অঞ্চলে পাট চাষ কমেছে অন্তত ৪০ শতাংশ। আর ২০ বছরের পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে এ অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে পাট চাষ কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। পাটচাষে অনিহার প্রধান কারণ কৃষক পাটচাষ করে উৎপাদন মূল্য তুলতে পারেনা। যার প্রভাব পড়ে কৃষি শ্রমের বাজারেও।