আবেদ হোসাইন :
আজ ৫ নভেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলের ভোটযুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে । ডেমোক্রেটিক হ্যারিস ও রিপাবলিকান ট্রাম্প নতুন বিশ্বমোড়ল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনো নারী প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হচ্ছেন কমলা হ্যারিস। ভোটযুদ্ধের ফলাফলের অপেক্ষায় বিশ্ব। গাজা উপত্যকা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়া। ইরান – ইসরাইল যুদ্ধের দ্বার প্রান্তে।নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনের সম্ভাবনা শূন্য।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব ভোট রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীনে। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটর থাকেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো যে প্রার্থী সাধারণ নাগরিকদের ভোটে জিতবেন ওই প্রার্থীই সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট পাবেন। সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান কম হলেও একই নিয়ম বিদ্যমান। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে জয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হয়। আর এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো বড় ভূমিকা পালন করে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রায় সাড়ে চার কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। জানা গেছে, ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার ইলেকশন ল্যাব প্রায় ছয় কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার ব্যালট গণনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এই ভোট নিয়ে নিয়মিত জরিপ প্রকাশ করছে। আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। কে হতে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা—ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি কমলা হ্যারিস?
২৭ অক্টোবর প্রকাশিত এবিসি ও ইসসোসের জরিপে ৫১ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ট্রাম্পের ৪৭ শতাংশের চেয়েও এগিয়ে ছিলেন কমলা। একই দিন সিবিসি জরিপের ফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, কমলা ও ট্রাম্পের ব্যবধান মাত্র এক পয়েন্ট, যথাক্রমে ৫০ ও ৪৯ শতাংশ। সিএনএন ও এসএসআরএসের জরিপে কমলার চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। এ জরিপে ৪৮ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে ও ৪৭ শতাংশ কমলাকে সমর্থন করেন।
বিশ্বজুড়ে শুধু যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ—দাবানলের মতো চতুর্দিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে বহু দেশ। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-হামাস, ইসরায়েল-ইরান ও ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ চলমান। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কেবল আতঙ্ক আর আতঙ্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মুসলিম বাইডেন-হ্যারিসের ইসরায়েল নীতিতে বিরক্ত। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের সমর্থন ট্রাম্পের দিকে। ইসরায়েল নীতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা গ্রিন পার্টিকে সমর্থন করতে চাইছেন। মার্কিন নির্বাচনে অন্যতম প্রধান আলোচিত ইস্যু মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত।
গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে সংঘটিত ইসরায়েলি গণহত্যার ক্ষেত্রে উভয় দলের অবস্থানই এক ও অভিন্ন। ইসরায়েলি বর্বরতায় উভয় দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরই মৌন সমর্থন রয়েছে। বস্তুত গাজায় সংঘটিত ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুই প্রার্থীই গাজায় বোমাবর্ষণ, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করা, চিকিৎসার সুযোগ না দেয়া, রোগের বিস্তার ঘটানো, জোরপূর্বক স্থানান্তর প্রভৃতি ভয়ংকর নীতির প্রশ্নে নিশ্চুপ। সুতরাং ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিরসনের সম্ভাবনা শূন্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবারের নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সাম্প্রতিক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় মুহুর্ত কাটাচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ভূ-রাজনীতি। এক দিকে ইউরোপের ইউক্রেন-রাশিয়া, ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইতিহাসের নজিরবিহীন নির্মম ও রক্তাক্ত আগ্রাসন চালাচ্ছেন ইসরাইলি যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।
তার আগ্রাসনকে ঘিরে ইতোমধ্যে উত্তপ্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্য। যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ইরান-ইসরাইল।

Discussion about this post