Print Date & Time : 9 July 2025 Wednesday 3:24 am

কর্ণফুলীতে পরিবেশের ১২টা বাজাচ্ছে ‘ডকইয়ার্ড’

জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: কর্ণফুলী উপজেলা। আয়তনে দেশের সবচেয়ে ছোট উপজেলা বলে দাবি করা হয়। তবে এ উপজেলাতেই রয়েছে একাধিক ডকইয়ার্ড। সেই সুবাদে কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠেছে জাহাজ পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কারখানা। এগুলোকে আমরা চিনি ডকইয়ার্ড নামে। এই ডকইয়ার্ড একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। তবে ডকইয়ার্ড কারখানা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে মালিকরা কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা করছেন না।

শিকলবাহা, চরপাথরঘাটা ও ইছানগরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। কাজ করছেন এখানকার শ্রমিকরা। যাদেরও নেই কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিবেশ, বেলা কিংবা আইনের তোয়াক্কা না করে গ্রামের ভেতরে চলছে ডকইয়ার্ড। বছরের পর বছর ধরে মানুষের জীবন ক্ষয়ে নিচ্ছেন। বিষাক্ত ধোয়া গ্যাসে ভরপুর পরিবেশ।

সরকারিভাবে কলকারখানা পরিদর্শনে নিয়োজিত কর্মকর্তা থাকলেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। শ্রমিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় মালিকপক্ষের ভ্রুক্ষেপ না থাকার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের মালিকপক্ষ ম্যানেজ করে চলার কারণেই অবৈধভাবে চলা ডকইয়ার্ডগুলোয় কোনো অভিযান পরিচালিত হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্স, কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড, বিএফডিসি ডকইয়ার্ড সংলগ্ন মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়ে, এস আলম অয়েল ট্যাঙ্ক এ স্যান্ড ব্লাস্টিংয়ের সৃষ্ট ধুলায় ইছানগরবাসী অতিষ্ঠ। এছাড়াও গড়ে উঠেছে এস আলম অয়েল ট্যাঙ্ক টার্মিনাল লিমিটেড (অয়েল স্টোর), ব্লু বে জেটি ফিশিং স্টোর, দেশ শীপ বিল্ডিং এন্ড ইন্জিনিয়ারিং লিমিটেড, পেনিনসোলা ফিশিং লিমিটেড, দেশ সী ফিশার লিমিটেড, সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্স, এসআরএল কসমস ট্রেওয়েল, ইউএশা ব্যাটারি ফ্যাক্টরী, মাসুদ এগ্রো প্রসেসিং ফুড প্রোডাক্ট লি, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ন্যাশনাল সিমেন্ট মিলস লিঃ, পরে মনেহয় প্রিমিয়াম সিমেন্ট, ডায়মন্ড সিমেন্ট লিমিটেড ও মাল্টি চ্যানেল স্লিপওয়েসহ একাধিক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে হাতেগোনা দু’একটি ডকইয়ার্ডের সরকারিভাবে অনুমোদন থাকলেও বাকিগুলো লাইসেন্স নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কয়েকজন ডকইয়ার্ড শ্রমিক জানান, ডকইয়ার্ডগুলো চলছে খেয়াল খুশিমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। প্রতিটি ডকইয়ার্ডে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক কেবল ব্যবহার করা হচ্ছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সরঞ্জামও নেই। নিরাপত্তার জন্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে প্রায়ই ডকইয়ার্ডগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। অনেক সময় সুষ্ঠু তদন্ত হয় না। অদৃশ্য কারণে প্রকৃত ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যায়।

সী রিসোর্স গ্রুপ কমপ্লেক্স ডকইয়ার্ডের ম্যানেজার মো. ইসমাইল বলেন, ‘ডকইয়ার্ডের পাশেই স্থানীয় মানুষের বসবাস। সেটা সত্য। ধুলোবালি, শব্দ দূষণ আর ডাস্ট এর বিষয়ে অভিযোগ পাচ্ছি। এ জন্য আমরা নতুন পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। এখন থেকে স্যান্ড ব্লাস্টিং করা হবে ভেজা বালি দিয়ে। এর জন্য মেশিন ইমপোর্ট করতেছে শিগগরই।’

এ বিষয়ে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘যেসব ডকইয়ার্ডের লাইসেন্স নেই সেগুলো অবৈধ। মালিকপক্ষের শ্রমিকদের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কালো ধোঁয়া বের করা যাবে না। পরিবেশের ক্ষতি করে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে গ্রামের ভেতরে ভারি শিল্পের কাজ করার জন্য কেউ অনুমোদন দেয়নি।’

এ প্রসঙ্গে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দূষণের এলাকা পরিদর্শন করব। যদি দূষণের সত্যতা পাওয়া যায়, তা হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//