জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন ঘাটের ২৫ স্পটেই এখন রাতে চোরাই পণ্য খালাস হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এখানে সন্ধ্যা হলেই বিভিন্ন জাহাজে তৎপর শুরু হয় চোরাই পণ্য সংগ্রহের মহোৎসব। কিন্তু নদীতে দেখা মিলে না কোন নৌ-পুলিশের। ফলে, কর্ণফুলী নদীকে ঘিরে একটি শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পুলিশ বাহিনীর একাধিক সদস্য জানান, এটা দেখার দায়িত্ব নৌ পুলিশের। নৌ পুলিশ বলছেন, স্থলে দেখার দায়িত্ব থানা পুলিশের। থানা পুলিশ বলছেন নদী কুলের ১৪০ ফুট দেখার দায়িত্ব নৌ পুলিশের। আবার একে অপরকে ইঙ্গিত করছেন কোস্টগার্ডও। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নমনীয় আচরণে চোরাকারবারীরা বেছে নিয়েছেন নিরাপদ রুট। আর রাতের আঁধারে চোরাই পণ্য নামিয়ে নিরাপদ জোনে পৌঁছে দিচ্ছে সিন্ডিকেট গ্রুপ।
কর্ণফুলী দক্ষিণ পাড়ের স্থানীয় লোকজন জানায়, ঘাটে ঘাটে রয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্স আর ক্যাশিয়ার। এরা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে ক্রাইম স্পট থেকে নিয়মিত মাসোহারা তুলেন। অপরদিকে, থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়েও নিয়মিত মাসোহারা তুলেন অনেকেই। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন বাহিনীর সোর্স ও ক্যাশিয়ার পরিচয় দিয়ে একাধিক ব্যক্তি মাসোহারা আদায় করায় চোরাকারবার বন্ধ হচ্ছে না। তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ২৫ স্পটেই চোরাই পণ্য খালাস হলেও যেন দশ চক্রে ভগবান ভূত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিকলবাহার তাতিয়া পুকুরপাড় ঘাট, চরপাথরঘাটার তোতাবাপের হাট ঘাট, কালারপোল এস আলম ফ্যাক্টরির ঘাট, ভেল্লাপাড়া ঘাট, কর্ণফুলী ব্রীজের নিচের এস আলম জেটি, দারোগা ঘাট, চাক্তাই-রাজাখালী ঘাট, ফিরিঙ্গীবাজার ঘাট, সদরঘাট, মাঝির ঘাট, সাম্পানঘাটা, শুলকবহর, কাপাসগোলা, চকবাজার, রুমঘাটা, ঘাট ফরহাদবেগ, বক্সিরহাট ও পাথরঘাটা ,চর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, চর চাক্তাই শিকলবাহার ভুলু মেম্বার ডকইয়র্ড, ডাঙাররচর ঘাট, মাতব্বর ঘাট, ১৫ নম্বরঘাট সহ দক্ষিণ পাড়ের একাধিক ঘাটে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লাখ লাখ টাকার অবৈধ চোরাই পণ্য উঠানামা করে।
এসব চোরাই পণ্যের মধ্যে রয়েছে-লোহা বা ইস্পাতের স্ক্র্যাপ, কালো তেল, ডিজেল, চিনি, চাউল, ডাল, সয়াবিন, গম, ভূট্টো, সারসহ নানা খাদ্যপণ্য। এসব পণ্যমূলত বিশেষ করে মাদার ভ্যাসেলে করে, বিএসআরএম, কেএসআরএম, জিপিএইচসহ বিভিন্ন কোম্পানির আমদানি করা মালামাল। ছোট লাইটারেজ জাহাজে করে পণ্য খালাসের জন্য আনা হয়। সেখান থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাষ্টার, লস্কর, ক্যাপ্টনেরা ঐ সমস্ত পণ্য কম দামে সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করে বলে সূত্র জানায়।
আরেকটি সিন্ডিকেট রয়েছে যারা চিনি, চাউল, ডাল, সয়াবিন, গম, ভুট্টা, সারসহ নানা খাদ্য পণ্য জাহাজ থেকে অল্প দামে কিনে মজুদ করে রাখেন। জানা যায়, কিছুদিন আগেও শিকলবাহা নৌ-ঘাট দখল নিয়ে দু’টি পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা ও সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি চোরা চালান।
জানতে চাইলে শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘নদীতে চোরাই পণ্য বেচাকেনা হলে সাধারণত নৌ পুলিশ দেখেন। আমরা কূলে এ ধরণের চোরাই পণ্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নিবো।’
সদরঘাট নৌ-থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন স্পটে নিয়মিত নৌ পুলিশের টহল জোরদার রয়েছে। নৌ পুলিশ চোরা চালান বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। নৌপুলিশের অভিযান চলছে এবং অব্যাহত থাকবে।’
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন অফিসার লেঃ কর্ণেল আশফাক বিন ইদ্রিসের নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘মূলত চোরাই পণ্যের বিষয়টি কাস্টমস বিভাগ দেখে থাকেন। যদি স্থল ভাগে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে বা ঘাট কূলে চোরাই পণ্য ওঠেনামা করতেছে এমন সুনিদির্ষ্ট তথ্য পেলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’
দৈনিক দেশতথ্য//এসএইচ//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post