গোফরান পলাশ , কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী ইউনিয়ন ধুলাসার। এই ইউনিয়নের দুইটি গ্রাম কাউয়ার চর ও চর গঙ্গামতি বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এই দুই গ্রামে ১৪ হাজার মানুষ বসবাস করলেও ঝড়, বন্যা, জ্বলোচ্ছ্বাসের সময় এদের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১টি।
যে কারণে এসব গ্রামের মানুষ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বাড়ি ঘর ছেড়ে পাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এছাড়া এ গ্রাম দুইটির অধিকাংশ মানুষের বসবাস বেড়িবাঁধের বাইরে।
গঙ্গামতি গ্রামের ইদ্রিস গাজী (৫৬) জানান, প্রলয়ংকারী সুপার সাইক্লোন সিডর এ গ্রাম থেকে থেকে কেড়ে নিয়েছে ৭টি তরতাজা প্রান। এ গ্রামের বেশির ভাগই জেলে। আবার কেউ কেউ দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
কাউয়ার চর গ্রামের আলী মাঝি (৪৮) জানান, ‘গ্রাম দুইটির বাসিন্দাদের অন্যতম একটি সমস্যা হলো, চরে একটি মাত্র আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। কাউয়ার চর এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষের বসবাস। সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ১০০ জন।’
‘অপরদিকে চর গঙ্গামতি এলাকায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস। সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৬০০ জন। অথচ মাত্র একটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ঝড়ের সময় মানুষজনের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান সংকুলান হয় না। এ চরের মধ্যবর্তী স্থানে আরও একটি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার। আরেকটা আশ্রয়কেন্দ্র হইলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে গ্রাম দুইটির অবস্থান হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের সময় বঙ্গোপসাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ে চর দুইটির অনেক টিউবওয়েল জোয়ারের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে গ্রাম দুইটির অবস্থান হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে গ্রাম দুইটি তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝড়ের সময় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে যেয়ে উঠতে হয় এ দুই গ্রামের মানুষদের। এই দুই চরের মধ্যে আরও একটি আশ্রয়কেন্দ্র থাকলে দু’চরে বসবাস করা মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এ দুই চরের মধ্যবর্তী স্থানে আরও একটি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার। এছাড়া কাউয়ার চর ও চর গঙ্গামতির উঁচু জায়গায় চরের বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য টিউবওয়েল বসানো দরকার, যাতে জোয়ারের পানিতে টিউবওয়েল নষ্ট না হয়।
চর গঙ্গামতি গ্রামের সাহেদা বেগম (৫৫) বলেন, ‘ ঘূর্ণিঝড় রেমালে’র সময় চরগঙ্গামতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কেননা বন্যার কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারে ঘরে কোমর পানি। দাঁড়াইবার জায়গা নেই। বন্যার পানির তোড়ে আমার ঘরের বেড়া ভেঙে গেছে। ঘরের ভিতরে আর থাকার মতো ছিল না। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয়েছে।’ বিপাকে পড়েছি।’ একই গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী রানু বেগম বলেন, ‘বন্যার পানিতে আমার বাড়িটা ধ্বসে গেছে। উপায় না পেয়ে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাই।’
কাউয়ার চর গ্রামের জেলে হোসেন আলী (৪৬) বলেন, ‘ঝড়ের সময় আমাগো দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের আশ্রয়কেন্দ্রে যাইয়া উঠতে হয়। চরের মধ্যে একটা আশ্রয়কেন্দ্র থাকলে আমাগো ভোগান্তি হইত না। আমরা চরেই একটা আশ্রয়কেন্দ্র চাই। এইডা হইলে ঝড়ের সময় আমরা দ্রুত যাইয়া আশ্রয় লইতে পারমু। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিও হেইহানে রাখতে পারমু। আমনেরা ওপরের দিকে একটা আশ্রয়কেন্দ্রের কথা জানাইয়েন।’
চর গঙ্গামতি এলাকার ইউপি সদস্য মো. সিদ্দিক হাওলাদার জানান, চর গঙ্গামতি বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা গ্রাম। বন্যার সময় সব কিছু তলিয়ে যায়। এখানে যে চলাচলের বেড়িবাঁধটি রয়েছে তা খুবই নিচু। ওই বেড়িবাঁধটি আরও উঁচু করে নির্মান করা প্রয়োজন। আর বন্যার সময় টিউবওয়েল গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর আবহাওয়া ভাল হলে টিউবওয়েলের পানি দুষিত থাকে, তা আর পান করা যায় না।’
ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিম জানান, কাউয়ার চরের বাসিন্দাদের কোন আশ্রয় কেন্দ্র নেই। দুর্যোগের সময় বেড়িবাঁধের বাইরের মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। চর গঙ্গামতি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধটি খুবই নিচু। ওই বেড়িবাঁধটি আরও উঁচু করে নির্মান করা প্রয়োজন।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ওখানে একটি সাইক্লোন শেল্টার প্রয়োজন। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post