হাসান আলী, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী আরেফসহ ৫জাসদ নেতাকে হত্যা দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের দাবিতে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের দিবস পালিত হচ্ছে বুধবার। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী সংগঠিত নৃশংস এই হত্যা দিবস স্মরণে কাজী আরেফ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিজয় উল্লাস চত্বরে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিকেল ৩টায় শোক ও স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কাজী আরেফ স্মৃতি সংসদ।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন সন্ত্রাস কবলিত রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ চলাকালে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠক জাতীয় নেতা কাজী আরেফ আহামেদসহ জেলা জাসদের সভাপতি বীরমুক্তিযুদ্ধা লোকমান হোসেন,সাধারন সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযুদ্ধা এ্যাডঃ ইয়াকুব আলী,স্থানীয় নেতা ইসরাইল হোসেন তফসের ও শমসের মন্ডলসহ ৫জাসদ নেতাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যাকরে।
এঘটনায় দৌলতপুর থানার তৎকালীন ওসি ইসাহক আলী বাদী হয়ে করা হত্যা মামলাটি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তদন্ত শেষে জড়িত অভিযোগে ২৯ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন এবং বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় আদালতে। ২০০৪ সালের ৩০ আগষ্ট আদালত ১০ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন। রায় পরবর্তীতে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সকল বিচারিক বিধি সম্পন্ন করে ২০০৮ সালে শুধুমাত্র ৯জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে বাকীদের খালাস দেন। এই ৯ জনের মধ্যে জামিনে থেকে অদ্যবধি ৫জন পলাতক থাকলেও ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কারান্তরীন ১আসামির মৃত্যু এবং ৩আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম স্বপনের দাবি, ‘কাজী আরেফ হত্যায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামীদের অবিলম্বে আসামীদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের’
সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আব্দুল জলিল বলেন, “কাজী আরেফ হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তি, স্বাধীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন এক অনন্য নেতৃত্ব গুনাবলীর অধিকারী। কাজী আরেফ হত্যার ঘটনাটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে চক্রটি একেরপর এক দেশকে যোগ্য নেতৃত্ব শুন্য করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে এসব নৃশংস হত্যা ঘটিয়ে চলেছে ওই চক্রটিকে সমুলে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই নৃশংসতা চলতেই থাকবে। তাই অবিলম্বে কাজী আরেফ হত্যা দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের গ্রেফতার ও রায় কর্যকর করার দাবি জানাচ্ছি”।
হামলায় নিহত মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ কাজী আরেফ আহমেদের স্ত্রী সাবেক এমপি রওশন জাহান সাথীর অভিযোগ, “কাজী আরেফ হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৪জন আসামী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে পলাতক থেকে চরম হুমকি ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা এমামলায় স্বাক্ষী ছিলেন তাদের সবাই বিশেষ করে প্রত্যদর্শী স্বাক্ষী কারশেদ আলমকে নানা ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ জানায় এবং এখনও পর্যন্ত যেসব আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি তাদের গ্রেফতার সেই সাথ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহী থেকে গ্রেফতার পলাতক আসামী রওশন আলীর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি জানাচ্ছি”।
পলাতক দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মান্নান মোল্লা, জালাল উদ্দিন ওরফে বাসার, বাকের, এবং জীবন। এসব আসামীদের গ্রেফতার ও রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কালিমামুক্ত করার দাবি নিহতদের পরিবার ও জেলাবাসীর।

Discussion about this post