কারখানায় শ্রমিকদের কাজের উৎসাহ বাড়াতে সিলভার লাইন গ্রুপের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পিঠা উৎসব। শীতের কুয়াশাভেজা সকাল থেকে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুরে কারখানার নিজস্ব মাঠে এ ব্যতিক্রমী পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের আয়োজনে গ্রæপের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা অংশগ্রহণে করে। গ্রুপের চারটি ইউনিটে পোশাক শ্রমিকদের বানানো অর্ধ শতাধিক বাহারি রকমের পিঠা নিয়ে বাঙ্গালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব পালন করা হয়। পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন সিলভার লাইন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. এ. এইচ. সেলিম। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত তিনদিনের পিঠা উৎসবকে ঘিরে সকাল থেকেই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছাস দেখা গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,পরিচালক এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানায় এসে শ্রমিকদের সঙ্গে পিঠা উৎসবে যোগ দেন। পিঠা উৎসবে কারখানার শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও যোগ দেন।
এ সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. এ. এইচ. সেলিম বলেন, শ্রমিকরা সবসময় উৎপাদনে ব্যস্ত থাকেন। পিঠা তৈরি করে খাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর। তাই এ শীতের মাসে শ্রমিকদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াতে এবং মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতেই এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগ দেন ওই গ্রুপের চারটি ইউনিটের ৮-১০ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বিশাল আকারের মাঠে পিঠা-পুলির দুই শতাধিক স্টল বসেছিল। আমরা যারা পোশাক কারখানায় কাজ করি অধিকাংশ লোকজনই বাঙ্গালির ঐতিহ্যের উৎস বা দিবস কর্মের চাপে পালন করতে পারিনা। এ কথা চিন্তা করেই সিলভার লাইন গ্রæপের পক্ষ থেকে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
তিন দিনব্যাপী মালিক পক্ষ তাদেরকে নিয়ে পিঠা উৎসবের আয়োজন করায় কারখানার শ্রমিকেরাও মহাখুশি। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের বানানো পিঠা দিয়েই পিঠা উৎসবের আয়োজনের কথা আগে কোথাও শোনেননি। এ জন্য তারা মালিকের প্রতি বেশি খুশি। পিঠা উৎসবে কারখানার বিভিন্ন সেকশনে কাজ করছে এমন শ্রমিক ভাই-বোনেরা তাদের বাসা থেকে তৈরি করে আনা নিজ-নিজ জেলার ঐতিহ্যবাহী পিঠাগুলো দিয়ে দোকান সাজিয়ে ছিলেন। কারখানার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে কিনে পিঠা খেয়েছে। এতে করে ক্রেতা, বিক্রেতা সবাই আনন্দ উপভোগ করেছেন। প্রতিটি কারখানায় মালিকটক্ষ এ রকম আয়োজন করলে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমে আসযেএ
কারখানার কোয়ালিটি সেকশনের নারী শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, পিঠা উৎসব বাঙ্গালির লোকজ ঐতিহ্য ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। তিনদিনের এ উৎসবে অর্ধশতাধিক বাহারি পিঠা প্রদর্শন করা হয়েছে। এত পিঠা একসাথে জীবনেও দেখি নাই, খাওয়াতো দূরের কথা অনেক পিঠার নাম আজই প্রথম শুনলাম। আমার অনেক ভালো লেগেছে। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের জন্য এ ধরনের উৎসব প্রতি বছর কারখানা কর্তৃপক্ষ পালন করলে মালিক শ্রমিক সুসম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
শ্রমিক জাহাঙ্গীর, রাশেদ, আকবর হোসেনসহ অন্যরা বলেন, এই পিঠা উৎসবে যেসব পিঠা উঠেছে এর মধ্যে হলো ম্যারা পিঠা, নাড়ু, চিতই পিঠা, দুধ খেজুর পিঠা, তালের কেক, রস মঞ্জুরি পিঠা, নয়নতারা পিঠা, সুইচ পিঠা, পাতা পিঠা, মুচমুচে পিঠা, শিরিস পিঠা, চানাচুর পিঠা, রসবড়া পিঠা, কুলি পিঠা, ক্ষীর পিঠা, পানতোয়া পিঠা, রসের জামাই পিঠাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পিঠা প্রদর্শন করা হয়েছে। আগে কখনো শুনিনি মালিক শ্রমকিদর নিয়ে গার্মেন্টসে এ ধরনের পিঠা উৎসব পালন করেছে। এই প্রথম আমাদের কারখানার মালিকের আয়োজনের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করলাম। বছরে একবার এ ধরনের আয়োজন করলে মালিক শ্রমিক সুসম্পর্ক আরো গভীর হবে।
সিলভার লাইন গ্রæপের পরিচালক (ডাইরেক্টর) সাহারা সেলিম বলেন, আমরা কর্মব্যস্ততার কারণে অনেকেই বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কথা ভুলে যায়। অথচ সাংস্কৃতি হচ্ছে বাঙালির প্রাণ। এটা ছাড়া সে পরিপূর্ণ বাঙ্গালির স্বাদ পাবেনা এবং পরিচয়ও বহন করতে পারেনা। তিনি বলেন, যে কোন উৎসবই মানুষের মাঝে মেলবন্ধনের সেতু তৈরি করে। সে দিক বিবেচনা করলে আমরা মনে করি আমাদের কারখানা মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক ভাই বোনদের নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন নিসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এ ধরনের উৎসব দেশের সকল পোশাক কারখানার মালিকেরা আয়োজন করলে বাঙ্গালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রমিকরা যেমন জানবেন, পাশাপাশি মালিক শ্রমিক সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে।
সিলভার লাইন গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর) সামিত হাসান বলেন, পিঠা উৎসবের আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বাঙ্গালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য শ্রমিকদের কাছে তুলে ধরা। তিনদিনব্যাপী আয়োজনের উদ্দ্যেশ্যে হলো জাতীয় উৎসবের আনন্দ উপভোগ করা। এ উৎসবের মাধ্যমে দেশের হারিয়ে যাওয়া পিঠাগুলোর আবারও পূণউজ্জীবিত করা হয়েছে। এ ধরনের উৎসব মালিক শ্রমিক সুসম্পর্ক উন্নয়ে নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন গ্রামীণ খেলার আয়োজন করা হয়েছ।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post