Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 6:46 pm

কাজ না করে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকার বিল নিয়ে উধাও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান

মেহেরপুর প্রতিনিধি : ৪ বছরেও বিল্ডিং হস্তান্তর হয়নি মেহেরপুরের একটি মাদ্রাসার। এক প্রকার বাধ্য হয়ে পরিত্যাক্ত বিল্ডিং ও মেঝেতে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, জেলা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সার্বিক সহযোগিতায় অতিরিক্ত বিল দেয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে।

অতিরিক্ত বিল হাতে পাওয়ার পর থেকেই উধাও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এসবের দায় নিতে চান না বর্তমান জেলা শিক্ষা প্রকৌশলী।

২০১৮-১৯ নির্বাচিত শীর্ষক মাদ্রাসা উন্নয়ন প্রকল্পে আওতায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রায় ৩কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় ৪ তালা বহুতল ভবনের কাজ পাই কুষ্টিয়ার আনিসুর রহমান নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কাজটি শুরু হয়ে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও। দীর্ঘ ৪ বছরেও মাদ্রাসা ভবনটি হস্তান্তর করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে করোনা মহামারীর কারণে কাজ বন্ধ রেখে অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করে পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এই বিল উত্তোলনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করেন মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুত্তাকিন।

মেহেরপুর জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৭৫% সম্পূর্ণ হলেও তার বিপরীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হয়েছে  ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার টাকার।

অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকার পরেও ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ২০ লাখ ১৯ হাজার ৬২৫ টাকা প্রদান করেন। এছাড়াও কাজ শেষ হওয়ার আগেই পিজি( পার্সোনাল গ্যারান্টেড) থাকা প্রায় ১৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সহযোগিতা করেন সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুত্তাকিন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত বিল্ডিং না থাকায় শিক্ষার্থীরা মান্দার মেঝে ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং গুলোতে ক্লাস করছেন। করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানান, বিল্ডিং না থাকাই শিক্ষা কার্যক্রম ও বিভিন্ন ব্যবহারিক ক্লাস থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এক রুমেই অনেকজন গাদাগাদি করেই পড়ালেখা করতে হচ্ছে আমাদের। আবার অনেক সময় খোলা মাঠে এবং মেঝেতে বসে আমাদের ক্লাস করতে হয়।  তবে আমাদের এই নতুন ভবনটি যদি সঠিকভাবে করে দেয় তাহলে আমাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। আমাদের অনেক বন্ধুরাই অন্যান্য স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। সঠিকভাবে লেখাপড়ার পরিবেশ না থাকায় এমনটাই দাবি করছিলেন গাংনী উপজেলার করমদি দারুস সালাম নেসারিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা

করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর শিক্ষা পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় ঝড় বৃষ্টির  সম্মুখক্ষণ হতে হয় আমাদের। গরমের মধ্যেও ক্লাস নিতে হয় রোদে পুড়ে। রৌদ্র তাদের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের। তবে ঊর্ধ্বতন ও কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন আমাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং এর কাজ দ্রুতই শেষ করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার আহ্বান জানান।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিল্ডিংটি পরে থাকায় বিদ্যালয় এর প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যবহারিক ক্লাস সহ অন্যান্য ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিস বরাবর যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি বলে জানান করমদি দারুসুন্নাহ নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নুর ইসলাম জানান, একসাথে বসে সংবাদ প্রচার করার জন্য, আজকের দর্পণ ও নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিবাদকের সাথে বসে সমঝোতা করার অনুরোধ জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা। মেহেরপুর শিক্ষক বউ কৌশলী অধিদপ্তরের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, কত টাকা বিল কিভাবে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার কাজ বিদ্যালয় পরিদর্শন করে তথ্য দেওয়া বাকিটা নির্বাহী প্রকৌশলী জানেনা বলে জানান সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুস্তাকিন জানান,ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লোকজন দুই থেকে তিনটি কাজ নেওয়ার ফলে এই বিল্ডিং এ কাজ করতে পারেননি। নিজের কিছুটা দায় গাফেলতি স্বীকার করে সংবাদটি প্রচার না করার অনুরোধ জানান সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী

মেহেরপুর শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান জানান,যোগদানের পর থেকে একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে দ্রুত কাজটি শেষ করার জন্য। ভাবে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কি কারণে অতিরিক্ত ৩২ লাখ টাকা বিল দিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। এ দায়ভার আমি নিতে চাই না বলে জানান বর্তমান এই নির্বাহী প্রকৌশলী।