ভাদ্র-আশ্বিনের হাওয়ায় দোল খাচ্ছে কাশফুল। কাশফুলের শুভ্রতা ভাসমান সাদা-মেঘের রঙে মিশে একাকার হয়ে উঠেছে।
কখনো কালো কখনো সাদা মেঘের আভরণে লুকিয়ে হাসে সোনালি সূর্য। মেঘ-সূর্যের লুকোচুরিতে রাঙা হয়ে উঠে শরতের কাশফুল।
প্রকৃতির অদৃশ্য শিল্পীর আঁকা অপরূপ সৌন্দর্য্যের নানা শিল্পকর্ম মনকে নানা বিষয় মনে করিয়ে দেয়। আর সেটা যদি হয় বিল কিংবা নদীর দুই ধার ঘেঁষে, তাহলে তো কথাই নেই।
এই কাশফুল ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা। দেশের উত্তরের ত্রি-সীমান্ত বেষ্টিত উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। এ অঞ্চলের সীমান্ত জুড়ে রয়েছে অপরূপ বাংলার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। দুই বাংলার সীমান্তের বুক চিরে প্রবাহিত নদী মহানন্দা বাড়িয়ে দিয়েছে পর্যটনের সম্ভাবনার গুরুত্ব। তার তীরে গজে উঠা কাশবন নতুনমাত্রা যুক্ত করেছে। এ নদীর তীরে দাঁড়িয়ে খালি চোখে দেখা যায় পৃথিবীর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা। যে পর্বত যুগল দেখতে প্রতি বছর নেপাল-দার্জিলিংয়ে য়ায় লাখ লাখ পর্যটক। সে পর্বতশৃঙ্গ এখান থেকে দেখা যাওয়ায় হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নামছে এ অঞ্চলে। এবার নদীর তীরে গজে উঠা কাঁশবন নজর কেড়েছে পর্যটকদের। প্রতিদিন শতশত পর্যটকের সমাগম ঘটছে নদীর ধারে কাশবনে।
সীমান্তঘেষা এ উপজেলার প্রাণকেন্দ্র থেকে অনতি দূরে সীমান্ত গ্রাম সরদার পাড়া। এ গ্রামে ধার দিয়ে প্রবাহিত নদী মহানন্দার ধার ঘেষেই কাশবন। শরতের হাওয়ায় দোল খাওয়া কাশফুল দেখতে নানা বয়সের নারী-পুরুষের সমাগম ঘটছে।
এদের বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী, প্রেমিক-প্রেমিকা ও দম্পতি। বাদ যায় না শিল্প-সংস্কৃতি প্রীয় মানুষগুলোও। প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে তারাও মিশে যাচ্ছেন কাশবনে। তাদের কেউ কেউ সাদা কাশফুলের রঙ্গের সাথে ম্যাচিং করে পরছে পোশাক। নারীদের শাড়ী, স্যালোয়ার-কামিজ ও কখনো চুলের খোঁপায় শোভা পাচ্ছে কাশফুল। ক্যামেরায় ছবি তুলছেন, সোস্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল করছেন।
![](https://dailydeshtottoh.com/wp-content/uploads/2021/10/received_254970986589089-1160x536.jpeg)
কথা হয় আর্নিকা জামান সৌরভী নামের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সাথে। তিনি জানান, শরৎ ঋতুতে কাশফুল আমার খুবই পছন্দ। মন খারাপ থাকলে এখানে ছুটে আসি। খুব ভালো লাগে। বেশ সময় কাটছে।
কাশফুল রঙ্গের পোশাক পরে এসে এক নব দম্পতিকে দেখা যায় কাশবনে ছবি তুলতে। তাদের সাথে কথা হলে জানান, আমরা এসেছিলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে। নদীর ধারে কাশবন, ভাবাই যায় না। এখানে দাড়িয়ে এক সাথে নদী, পাহাড়, পাখি, পাথর শ্রমিকদের পাথর তোলা, ওপারেও (ভারত) কাশফুলের মুগ্ধতা দেখে পুলকিত হয়েছি।
সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী আশরাফুল ইসলাম জানান, ষড়ঋতুর এই দেশে শরতের আবহ মুগ্ধকর। ভাদ্র-আশ্বিনে শরত ঋতুতে কাশবনে সাদা ফুল মুগ্ধ করার মতো। যদিও এই কাশিয়া দিয়ে এক সময় গ্রামাঞ্চলে ঘরের বেড়া আর ঝাড়– বানাতে দেখেছি, এখন এর সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। পর্যটনের সম্ভাবনা তৈরি করছে। নদীর তীর ঘেষে যদি কাশবন করা যায়, তাহলে পর্যটকের সমাগম আরো বাড়বে। পর্যটন এলাকা হিসেবে এই অঞ্চল আরও সমৃদ্ধ হবে।
ট্যুরিজম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোক্তা এস কে দোয়েল ও তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজমের মোবারক হোসাইন জানান, কাশফুল ছন গোত্রীয় এক ধরনের ঘাস। এটার আদি নিবাস রোমানিয়ায়। ঘাস জাতীয় উদ্ভিদটি উচ্চতায় ৭-৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছটির চিরল পাতার দুই পাশ বেশ ধারালো। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণও। এর ঔষধি গুণও রয়েছে। মানুষের পিত্তথলিতে পাথর, শরীরে কোথায় ফোড়ার সৃষ্টি হলে তার ব্যথা উপশমে কাশফুলের মূল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইংরেজি নাম ক্যাটকিন এবং বৈজ্ঞানিক নাম হলো স্যাকরারাম এসপোটেনিয়াম। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটন শিল্পে বিকাশ ঘটনো যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, তেঁতুলিয়া পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। আর আমরা পর্যটকদের জন্য পর্যটন শিল্প উন্নয়নে নানান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে এবার মহানন্দা নদীর ধারে গজে উঠা কাশবনে পর্যটকের সমাগম বিষয়টি নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এবি/দৈনিক দেশতথ্য/১৬ অক্টোবর /২০২১
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post