এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া কুমারখালীর পান্টি বাজারের সিএনজি স্টান্ডের পাশেই ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পান্টি জোয়ার্দ্দার সোলাইমান করিমুননেছা নূনারী হাফেজিয়া মাদ্রাসা।
প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ধর্মপ্রান ব্যাক্তি তোফাজ্জেল হক জোয়ার্দ্দার জমি দান করেন এবং সেই জমির উপর নির্মিত হয় একটি মাদ্রাসা এবং কিছু দোকান ।
আর সেই দোকান থেকে তোলা ভাড়া দিয়েই চলে আসছিল মাদ্রাসাটি। এখান থেকে শত শত শিক্ষার্থী হাফেজিয়া সম্পূর্ন করে দেশের বিভন্ন স্থানে কোরআনের আলো ছড়াচ্ছেন।
তবে মাদ্রাসার জমিটি পান্টি বাজারে হওয়ার এই মাদ্রাসার জমিটি অনেক মূল্যবান হওয়াতে দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের কবজাতে নেওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি কেউ। তবে হাসিনা সরকার পতনণের পর আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাসদের উপজেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ ১১জন মিলে কিনে নিয়ে দখলে নিয়েছে মাদ্রাসার জমিটি।
এর পর পরই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়ে মাদ্রাসার ভবন, বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে গিয়ে জানান যায়, উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি মৌজার-১৮০ খতিয়ান নাম্বার ৪৯৩ ও দাগ নাম্বার ১৭৪৬ এর ৮শতাংশ জমি মরহুম তোফাজ্জেল হক জোয়ার্দ্দার দান করলেও হাসিনা সরকার পতনের পর ফ্যাসিষ্ট যুবলীগের কুমারখালী উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার রাশিদুজ্জান তুষার, জাসদ থেকে নির্বাচিত সাবেক কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সহ ১১ জন মিলে এই মাদ্রাসার জমিটি কিনে নিয়েছেন এবং মাদ্রাসার স্থাপনা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামীলীগ, বিএনপির ও জাসদের উপজেলা পর্যায়ে এই তিন নেতার একত্রিত হয়ে মাদ্রাসা তুলে দিয়ে জমি কেনার ঘটনায় সাধারন জনগনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রা দেখা গছে।
রাজনৈতিক মহলেও চলছে সমালোচনার ঝড়। এ বিষয়ে পান্টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধান সম্পাদকও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মাদ্রসা
এঘটনায় স্থানীয়রা বলছেন, ১৪৪৬ দাগে মোট জমি ৪৫ শতাংশ তার মধ্যে ৮ শতক জমি মদ্রাসার জন্য দান করলেও তার সন্তানরা বিক্রি করে দিয়েছে এটা খুবই জঘন্য কাজ করেছে।
জানাগেছে আওয়ামীগের ও জাসদের দোষরদের নিয়ে বিএনপি নেতা হাফিজ চেয়ারম্যান এই জমি কিনেছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন জানান, চলতি বছর ৭ই আগষ্ট ২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গোপনে কুষ্টিয়ার টালি পাড়ায় বোন হোসনা বানুর বাসায় বাতিল হওয়া নামখারিজের মাধ্যমে কমিশন বসিয়ে জমি রেজিঃ করে দেন মনিরুল বা শহিদুল নামের একজন পাওয়ার ক্ষমতাবলে।
তবে মাদ্রাসা ভেঙ্গে সেই জমি বিএনপি আওয়ামীলীগ ও জাসদ নেতাসহ ১১জন ক্রয় করার ঘটনায় একাবাসী প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মাদ্রাসাটির সর্বশেষ প্রায় ১০ বছর দায়িত্ব পালন করা সভাপতি মহব্বত মোয়াদ্দার জানান, এখানে কত মানুষ দিনের শিক্ষা নিয়েছে । কিভাবে সাদ্রাসার জন্য দান করা জমি ৩০বছর পর ফেরত নিলো আর এসব নেতারাই বা কি করে কিনলো। এতাগুলা শিক্ষার্থীর দিনের শিক্ষা বন্ধ হলো আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম তিনি এর বিচার করবেন।
মাদ্রাসাটিতে থেকে পড়ালেখা করা একজন শিক্ষার্থী জানান, আমরা এখানে পড়াশোনা করেছি কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা এক হয়ে দখলে নিবে ভাবতেও পারিনি । আশা করি সরকার এর ব্যবস্থা নিবেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব পালন করা একজন সাবেক শিক্ষক জানান, অনেক দিন ধরেই এই জমির উপর এই ক্রেতাদের চোখ ছিল । তার দাতার সন্তানদের বিভিন্ন ভাবে ভূল বুঝিয়ে জমিটি কিনেছে আর মাদ্রাসাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে ছিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জমিটি যেনো দ্রত ফিরিয়ে দেওয়া হয় সেই দাবিও জানাচ্ছি।
মাদ্রাসার দান করা জমি ফিরিয়ে নিয়ে বিক্রি করা জমির বিষয়ে দাতা তোফাজ্জেল হক জোয়ার্দ্দারের ছেলে উজ্বল জোয়ার্দ্দারের সাথে হুইয়াটসআপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করিননি।
তবে জাসদ থেকে নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সাথে মিলে হাফেজিয়া মাদ্রাসার জমি ক্রেতা আব্দুল হান্নান মুঠোফোনে জানান, আমি তার সন্তানকে বলেছিলাম বাবা তোমার বাবা করেগেছে রেখে দাও এটা, তারা শোনেন নি, যেহেতু তারা বিক্রি করেছে তাই কিনেছি।
রাজনৈতিক এমন সময়ে একসাথে আওয়ামীলীগ জাসদ বিএনপি মিলে জমি কিনলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেনার আগে জানতাম না কারা কারা আছে। কে কে আছে না জেনেই আমি দুই ভাগ কিনেছি। আর এটাতো মূলত বিজনেস নামখারিজও বাতিল হয়নি। জমিটি ৪/৫ কোটি দিয়ে কেনা হয়েছে জমিটি বলেও জানান তিনি।
তবে এলাকাবাসীর দাবি, আওয়ামীলীগ, জাসদ ও বিএনপির এই জোট ভেঙ্গে জমিটি ফিরিয়ে দিয়ে আবারো নতুন করে হায়েজিয়া মাদ্রাসাটি চালু হোক। এর মধ্যদিয়ে আবারো আল্লাহর কোরআনের বানী ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে এমনটি প্রত্যাশা সবার।

Discussion about this post