ছাব্বির হোসেন কুমারখালীঃ কুষ্টিয়া কুমারখালীতে সপ্তম শ্রেণির (১৩) এক ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের এলংগী পাড়ায় ঘটেছে। এ ঘটনার ২২ দিন পর কুমারখালী থানায় মামলা হয়েছে।
সোমবার (৯ আগষ্ট) রাত ১২ টার পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা বাদী মামলা করেন। (মামলা নম্বর-১০, তাং ১০ আগষ্ট, ২০২১)। এদিকে ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছে।
মামলা এজাহার ও ভিকটিমের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, নন্দনালপুর ইউনিয়নের এলঙ্গী পাড়ার মোঃ লতিফ শেখের ছেলে মেহেদী হাসানের (৩০) স্ত্রীর নিকট নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে যেত ওই ছাত্রী। সেই সুযোগে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান প্রায়ই ছাত্রীকে যৌনপীড়ন করার চেষ্টা করত।
গত ১৮ জুলাই দুপুরে ছাত্রীর নিজ বাড়িতে ফাঁকা পেয়ে মেহেদী হাসান জোরপূর্বক শয়নকক্ষে নিয়ে যায় এবং স্কুল ছাত্রীকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এ বিষয়টি কোরবানির ঈদের ২ দিন পর ২২ জুলাই ছাত্রী তাঁর মাকে জানায়। পরে ছাত্রীর বাবা স্থানীয় মাতব্বর মোঃ আব্দুল রশিদের নিকট পরামর্শের জন্য যান। মাতব্বর রশিদ বাবাকে থানায় যেতে নিষেধ করে এবং স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু মাতব্বর টালবাহানা করে সময় ক্ষেপণ করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
এরপর ছাত্রীর বাবা স্থানীয় বহিস্কৃত মেম্বার শরিফুল ইসলামের নিকট যায়। মেম্বার শালিসের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে করে ছাত্রীর পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে টাকা না নিয়ে ছাত্রীর বাবা থানায় মামলা করেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে মেহেদী হাসানের স্ত্রীর নিকট পড়তে যেত। সেই সুযোগে বিভিন্ন সময় যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের চেষ্টা করত। গত ১৮ জুলাই দুপুরে মেহেদী আমার বাড়িতে আসে এবং বাড়িতে মেয়েকে একা পেয়ে শয়নকক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি আমার স্ত্রীর মাধ্যমে গত ২২ জুলাই জানতে পারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরে স্থানীয় মাতব্বর রশিদের কাছে পরামর্শের জন্য যায়। মাতব্বর থানায় না পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে মিটমাটের কথা বলে সময় নেয়। কিন্তু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একের পর এক সময় নিয়েও মাতব্বর সমাধান করেনি। পরে থানায় মামলা করেছি।’
ওই ছাত্রীর দাদা বলেন, ‘মাতব্বরের পর স্থানীয় মেম্বর শরিফের কাছে গিয়েছিলাম। মেম্বর সালিশে ৪০ হাজার টাকায় মিটমাট করেন। কিন্তু পরে ৩০ হাজার টাকা দিতে চাওয়ায় থানায় মামলা করেছি।’
এই বিষয়ে অভিযুক্ত মেহেদী হাসানের স্ত্রী বলেন, ‘আমি শুনেছিলাম যে মেহেদী ছাত্রীর হাতে ধরেছিল। ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা।’
স্থানীয় মাতব্বর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, উভয়পক্ষ আমার আত্মীয়। আমি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে কোনোপক্ষই যোগাযোগ করেনি।
তিনি আরো বলেন, এলাকার মাতব্বর হিসেবে মাঝেমাঝেই এধরনের সালিশ করতে হয়। কোর্ট যদি বিচার করতে পারে, আমি কেন পারবনা?
নন্দনালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বহিস্কৃত মেম্বার শরিফুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের বিষয়ে আমরা সালিশ করতে পারিনা। টাকার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। প্রমাণ থাকলে এসে কথা বলবেন।
কুমারখালী থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে স্কুল ছাত্রীর বাবা থানায় মামলা করেছে। আসামী গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত। অন্যান্য অভিযোগগুলো গুলো তদন্তে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post