মানুষের বক্তব্য ও চর্চা ভিন্ন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দুর্নীতি রয়েছে, যা আমরা সচরাচর বলি না। সরকারি-বেসরকারিসহ সকল প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার প্রয়োজন। আমরা বিভিন্ন মহল থেকে তদবিরের সম্মুখীন হই। যারা তদবির করেন, তারাও দুর্নীতির অংশীদার। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করি। এই সুযোগ ইতিপূর্বে পাই নি। সুযোগটা দেশের জন্য কাজে লাগাই। পরিবার থেকে সততার শিক্ষা নিতে হবে। ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে ০৯ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে জেলা প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), কুষ্টিয়ার আয়োজনে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মঈনুল হাসান রওশনীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ। সভায় আলোচক হিসেবে সনাক সদস্য ড. সরওয়ার মুর্শেদ বলেন, বিগত সময় দুর্নীতিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন করুন, সাংবাদিকেরা লেখুক, মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাক সকল মানুষ। সিভিল সার্জন ডা: মো: আকুল উদ্দিন বলেন, স্বপ্ন নয়, বাস্তবে তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পলাশ কান্তি নাথ বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা জনগনের দিক থেকেও আসতে হবে। তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পার্থ প্রতিম শীল, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান খান প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে মঈনুল হাসান রওশনী বলেন, দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন সমন্বিত প্রয়াস। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যানে, সকলে নিজ নিজ স্থান থেকে দুর্নীতিকে না বলি। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন দুদকের উপ সহকারী পরিচালক মোঃ আবু তালহা। দিবসটি উপলক্ষ্যে টিআইবি’র ধারনাপত্র প্রদান করা হয়। “নতুন বাংলাদেশ দুর্জয় তারুণ্য দুর্নীতি রুখবেই” এই প্রতিপাদ্যেকে সামনে রেখে টিআইবি মুক্তিযুদ্ধ ও ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রকৃত চেতনার আলোকে রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে এদেশের সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, ন্যায়বিচার, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চয়তাসহ একটি বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত, দুর্নীতিমুক্ত, মানবাধিকার-ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ‘‘নতুন বাংলাদেশ’’ বিনির্মাণে উদ্যোগী হওয়াসহ ১৪টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সনাক প্রতিনিধি রফিকুল আলম, শাহজাহান আলী, তহ্মিনা চৌধুরী, মিজানুর রহমান লাকী, জহুরুল হক চৌধুরী, তারিকুল হক তারিক, টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ রায়হানুল ইসলামসহ ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপ ও এ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) এর সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ। এর আগে সকালে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর প্রধান ফটকের সামনে অংশগ্রহনকারী সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

Discussion about this post