এনামুল হক কুষ্টিয়া ঃ
কুষ্টিয়ায় আইন অমান্য করে ওভার লোড নিয়ে কুমারখালী থেকে বালুভর্তি শতশত ড্রাম ট্রাক বেপরোয়া গতিতে ঢুকছে কুষ্টিয়ার আনাচে-কানাচে শহর ও গ্রামে।
এদিকে প্রশাসনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এসব যানের চাকার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উপ- সড়ক। ধ্বংসের মুখে রয়েছে সেতু।
বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা লেখির পরও বন্ধ হচ্ছে না এগুলো। সাধারণ মানুষ প্রশাসনকে দায়ী করে বলছে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অথবা ভাগ বাটোয়ার সুবিধার কারণে প্রশাসন এগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এগুলো নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধেও পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে গত শনিবার ড্রাম ট্রাকের পৃষ্ঠে প্রাণ দিতে হয়েছে একজনকে এবং মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরো তিনজন।
এ ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন মহল থেকে জানানো হয় দিনের বেলা ড্রাম ট্রাক চলবে না।
কিন্তু কথা কেউই রাখেনি। মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পার হতে না হতেই কুষ্টিয়ায় দিনের বেলাতেই শত শত ড্রাম ট্রাকের অবাধ চলাচল শুরু হয়। যেন রক্তের পিপাসায় মিটছে না।
একটি সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ায় ৪০ টার মত ড্রাম ট্রাকের লাইসেন্স রয়েছে। তাহলে শত শত ড্রাম ট্রাক কোথা থেকে আসছে। এছাড়াও ড্রাম ট্রাক গুলো হেলপার দিয়ে চালানোর অভিযোগও রয়েছে। এগুলো দেখার যেন কেউ নাই। আর এইসব ড্রাম ট্রাক গুলোর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তারাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এই ধরনের গাড়ি হাইওয়েতে নামিয়ে শত শত কোটি টাকার রাস্তা ধ্বংসের মিশনে নেমেছিল। ৫ই আগস্টের পর প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও বালু মহলে কোন পরিবর্তন হয়নি। কোটিকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো এখন ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। এতে এলাকাবাসীসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পরিবহন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। কেবল সড়কের ক্ষতি নয়, প্রতিদিন অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব অবৈধ বালুবাহী গাড়ির চাকার নিচে প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের। দন্ডবিধিতে কোন সরকারি সম্পদের ক্ষতি করলে এর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা আছে। ৪৩১ ধারা মোতাবেক সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধন দন্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম জেলসহ অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
অথচ কুষ্টিয়ায় ড্রাম ট্রাক চলাচল দেখে মনে হচ্ছে প্রশাসন এসব আইন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এবং মহানন্দে ড্রাম ট্রাকগুলো ছুটে চলেছে কুষ্টিয়া শহর ও গ্রামের আনাচে-কানাচে।
বিভিন্ন এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন-পুলিশ সদস্যদের সামনে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে মাটি- বালুবাহী অবৈধ ডাম্পার ট্রাক। অথচ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রয়োগ না করে শুধু মোটরসাইকেল ধরপাকড় করছে সংশ্লিষ্টরা। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে তখন একটু প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তারপর যা তাই হয়ে যায়। আমরা রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসা করি। অথচ ড্রাম ট্রাকের জন্য যাওয়া আসার একদমই অবস্থা নাই। বালু বহনকারী বেপরোয়া যান চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু’পাশের ঘর-বাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড ধুলাবালি বাড়িঘর খাবার-দাবারের ভেতরে ভরে যায়। খাবারদাবার আসবাবপত্র জামা কাপড় সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর ড্রামগুলো এমনভাবে ওভারলোড করে মোড় দাপাদাপি করে চলাচল করছে
ছোটখাটো এক্সিডেন্ট প্রতিনিয়ত হচ্ছে। আসলে এগুলো এখানে বন্ধ হওয়া উচিত। আর দিনের বেলা যেন কোন ভাবেই বালু তুলতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে স্থানীয়রা।
কুমারখালী থানার অফিসার জানান, দিনের বেলায় তো চলার
কথা নয়। আপনি বললেন আমি কালকে থেকে দেখব বিষয়টি। এ বিষয়ে চৌরহাস হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার জানান, ড্রাম ট্রাকের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করছি। নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট হচ্ছে । তবে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুল রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Discussion about this post