Print Date & Time : 10 June 2025 Tuesday 2:13 am

কুষ্টিয়ায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা

নিজস্ব প্রতিবেদক :কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে অব্যহত রয়েছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। যার ফলে জীবনযাত্রা কঠিন হয়েছে পড়েছে মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষের। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

গত এক সপ্তাহে কুষ্টিয়ার বাজারে সবজি সহ প্রায় সকল প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অপরিবর্তিত থাকলেও ডিম, ডাউল এবং পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ প্রতিবছর শীতকালে পেঁয়াজের মৌসুম হাওয়ার কারণে এই সময়ে পেঁয়াজের মূল্য বছরের অনান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। গতকাল কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের তুলানয় ১৫ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

কাঁচা মরিচ গত সপ্তাহের দামেই অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আদার মূল্য গত সপ্তাহের মতই ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। সেই সাথে ভারতীয় রসুন বা বড় রসুন গত সপ্তাহের মত ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এবং দেশী রসুন ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আলুর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা কমে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর মত বেগুণের দামও ও কজিতে ৫ টাকা কমে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।এবং কাঁটাযুক্ত বেগুণ গত সপ্তাহের মত এই সপ্তাহতেও ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আলু এবং বেগুণের দাম কমলেও টমেটোর দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও শিম গত সপ্তাহের মত এই সপ্তাহেও ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে গত সপ্তাহের মত অপরিবর্তিত দামে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। করলা গত সপ্তাহের মত এই সপ্তাহতেও ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গাঁজরের দামও গত সপ্তাহের মতই রয়েছে। 

বাজারে প্রতি কেজি গাঁজর ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্যাপসিকামের মূল্য গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ফুলকপির মূল্যও রয়েছে স্থিতিশীল, প্রতি কেজি ফুলকপি গত সপ্তাহের মত এই সপ্তাহেও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ আকার ভেদে প্রতি পিছ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। কুষ্টিয়া পৌর বাজারে মাছের দোকান ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু মাছের দাম কমলেও অধিকাংশ মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ছোট আকারের পাবদা মাছের কেজি প্রতি মূল্য ৩০০ টাকা। ইলিশ মাছ আকার ভেদে কেজি প্রতি মূল্য ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। চিংড়ি মাছ আকার ভেদে কেজি প্রতি মূল্য ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা। তবে কাচকি মাছ গত সপ্তাহরে তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এই সপ্তাহের দাম ২২০ টাকা। সিলভার কার্প মাছের কেজি প্রতি মূল্য ১৩৫ টাকা। পাঙ্গাস মাছ গত সপ্তাহরে তুলনায় কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এই সপ্তাহের দাম ১৯০ টাকা। রুই মাছের কেজি প্রতি মূল্য ৩০০ টাকা। তেলাপিয়া মাছের কেজি প্রতি মূল্য ১৮০ টাকা। 

বেলে মাছের কেজি প্রতি মূল্য ৪৮০ টাকা। শিং মাছ কেজি প্রতি মূল্য ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা। নদীর ট্যাংরা মাছের কেজি প্রতি দাম ৭২০ টাকা এবং চাষের ট্যাংরা মাছ কেজি প্রতি দাম ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়াও কাতলা মাছ আকার ভেদে কেজির প্রতি মূল্য ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং বাটা মাছের কেজি প্রতি মূল্য ২৪০ টাকা। কুষ্টিয়া পৌর বাজারে মুরগির মাংশের দোকান ঘুরে দেখা যায় গত সপ্তাহের মতই রয়েছে মুরগির মাংশের মূল্য। প্রতি কেজি সোনালী মুরগির দাম ২৮০ টাকা। প্রতি কেজি বয়লার মুরগির দাম ১৯০ টাকা। প্রতি কেজি লেয়ার মুরগির দাম ৩২০ টাকা এবং প্রতি কেজি দেশী মুরগির দাম ৫০০ টাকা। এছাড়াও প্রতি কেজি রাজহাঁসের দাম ৫০০ টাকা এবং দেশী হাঁস ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাঙালির প্রিয় খাবার গরুর মাংশের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি গরুর মাংশ ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে তা ৭২০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। 

খাসির মাংশের দাম সপ্তাহের মতই কেজি প্রতি ১০০০ টাকা রয়েছে। মুদি দোকানের গিয়ে জানা যায়, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য গত সপ্তাহের মত অপরিবর্তিত থাকলেও মসুরের ডাউলের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করেছে বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশী মসুরের ডাউল ১৪০ টাকা দরে এবং মোটা মসুরের ডাউল প্রতি কেজি ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রায় সপ্তাহ জুড়েই আলোচনায় ছিলো ডিমের দাম। পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতি হালি ডিমের মূল্য প্রায় ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতিহালি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পৌর বাজারে বাজার করতে আসা এক গৃহিনী বলেন, মাসে যা আয় হয়, তা দিয়ে বাসাভাড়া দিতে আর বাজার করতেই নাজেহাল অবস্থা। এরপর বাচ্চাদের লেখাপাড়ার খরচ। সেই সাথে রোগ বালাই তো আছেই। সরকারের উচিৎ মানুষের আয়ের সাথে মিল রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম নির্ধারণ করা। তা না হলে চাকুরীজীবি এবং খেটে খাওয়া মানুষের জীবণ ধারণা করা কঠিণ হবে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রোকসানা বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে চলতে কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করার নাই। 

হরিপুরের ভ্যান চালক আলা উদ্দিন বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়ে ৪ জনের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। আমাদের দেখার কেউ নাই। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম জানান, মাসের প্রথম দিকের তুলনায় শেষের দিকে বাজারে ক্রেতা কম হাওয়ার কারণে মাছের দাম কিছুটা কম থাকে। সবজি ব্যবসায়ী বিপুল জানান, সবজির আমদানি কম, সেই সাথে বেচাকেনাও কম, তাই দাম আগের মতই আছে। মুরগি ব্যবসায়ী বকুল এবং মুদি ব্যবসায়ী হাকিম ষ্টোরের মালিক সুমন বলেন, আমদানি এবং বেচাকেনা কম হাওয়ার কারণে দাম একই রকম। প্রত্যেক মাসের শেষের দিকে এমনই হয়।

খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,৩০ জানুয়ারি ২০২৪