এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় “চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে অতি বর্ষণে জেলার মাঠ ফসলের ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বিদ্যমান ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ ফসলের আর্থিক ক্ষতির প্রাথমিক পরিমান প্রায় ৮ কোটি টাকার অধিক বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন ধান, কলা, সবজি, মাসকলাই, তুলা, মরিচ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও পেঁপে।জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে দফায় দফায় কয়েক দিনের অতিবৃষ্টির প্রভাবে কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৬শ ৬৯ জন কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমান ৮ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া সদর, খোকসা, কুমারখালী, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলাসমুহের আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমান প্রায় ৮৯০ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমান ৫৩০ দশমিক ৫০ হেক্টর, এর মধ্যে সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৮৮ দশমিক ৫৪ হেক্টরসহ মোট ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমান দাঁড়িয়েছে। ১১৮ দশমিক ৫৪হেক্টরে। যা জেলার মোট ফসলী জমির শতকরা দশমিক ১১ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ক্ষতির
পরিমান প্রায় ১৯৯৪ দশমিক ৬৬ মেট্রিকটন।
জেলা জুড়ে আমন ধান, কলা, সবজি,মাসকলাই, তুলা, মরিচ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ও পেঁপের এবছর আবাদ হয়েছিলো ১ লাখ ৫ হাজার ৩শ ২৭ হেক্টর। এরমধ্যে এখনও অক্ষত আছে ১ লাখ ১ হাজার ৯শ ২৪ হেক্টর
জমির ফসল। টানা বৃষ্টির কারনে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ জমির মধ্যে ১৩৮ জন কৃষকের আমন ধান ছিলো ১৭ দশমিক ০৪ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ০১৯ শতাংশ, ৩৮৬ জন কৃষকের কলা ২৬ দশমিক ৫০ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৬৫৫ জন কৃষকের সবজি ৩২ দশমিক ৩৮ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৩৯৭ জন কৃষকের মাসকলাই ৩৩ দশমিক ৫৯ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ, ৩ জন কৃষকের তুলা শুন্য দশমিক ১৩ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ০২১ শতাংশ, ৬৭ জন কৃষকের মরিচ ৬ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ১৫ শতাংশ, ১৭ জন কৃষকের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ২ হেক্টর যা মোট আবাদের ১ দশমিক ১৩ শতাংশ, ৬ জন কৃষকের পেঁপে ১ হেক্টর যা মোট আবাদের শুন্য দশমিক ৩০ শতাংশ।
এই অতিবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কলা চাষীরা। প্রায় ৩৮৬ জন কৃষকের ১০১২ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন। যার বাজার মুল্য প্রায় ৪ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমানের দিক দিয়ে মাসকালাই এর ক্ষতিগ্রস্থ জমির পরিমান ৩৩ দশমিক ৫৯ হেক্টর। যার বাজার মুল্য প্রায় ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চাষী আবেদ আলী বলেন,‘আমার সাড়ে তিন বিগে জমিত কালাই বুনিছিলাম, সব পানিত ডুইবি গেছে। ও আর হবি না। দেকি পানি সরি গেলি আবার অন্যকোন ফসল বা সব্জি চাষ করবো’।
কুমারখালী জন্নাথপুরের সব্জি চাষী খয়বার সেখ বলেন, ‘আমি সারা বছরই সব্জি চাষ করি। একটা উঠে আর একটা লাগাই। এবছর দুই বিঘা জমিতে আগুপিছু করে
বাগুন লাগাইছিলাম, কিন্তু লাগাতার বৃষ্টিতে বাগুনির ভুঁইত পানি জুইমি থাকিগাছ সব মরি গেলো’।
একন অপেক্ষা করছি বষ্টি বাদলা যাক, মাটের কাদাপানি শুকাক তারপর আবার কি করা যায় দেখি’। এছাড়া কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চর এলাকা চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের নিচু চর ডুবে মাসকলাই এবং মরিচের ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে সম্ভাব্য মাসকলাই এর পরিমান ১ হাজার ৬শ ৭৯ হেক্টর এবং মরিচ ৭০ হেক্টর। কৃষি বিভাগ ও ভুমি অফিসের মালিকানা সত্ত্বের তালিকা বহির্ভুত হওয়ায় চরাঞ্চলের এসব ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ভিত্তিক বাজারমুল্য নির্ধারিন করা হয়নি। মিরপুরের ধানচাষী জিহাদুল ইসলামের অভিযোগ, এই বছর আন সিজিনে অতি বৃষ্টি হয়ে আমার থোর হয়ে যাওয়া ৩ বিগি ধান সব নষ্ট হয়ে গেলো। এই ধানের পিছনে আমার খরচ হইছিলি তাও ৪০/৪৫হাজার টাকা। এই পানিতে এর আগে এতো ডুনিনি। এলাকার প্রভাবশালীরা বিভিন্ন পয়েন্টে পানি গড়ি যাওয়া খাল দখল করি ভইরি ফেলানির জন্যিই এই ক্ষতিডা হলি’।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান জানান, “সেপ্টেম্বর মাসে বৃষ্টি এবং পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পরবর্তী চাষাবাদের প্রস্তুতি সংক্রান্ত পরামর্শ এবং প্রনোদনা দেওয়া হবে।
আমি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ চর এলাকা পরিদর্শন করেছি। দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব মাসকলাই ও মরিচ ক্ষেত ডুবে গেছে সেগুলো কৃষি জমির মধ্যে পড়ে না। কৃষকরা এগুলো বাড়তি সুবিধা নিয়ে থাকে। বিগত দিনের বছরগুলোর
চেয়ে এবছর অধিক পরিমান পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চরাঞ্চলের মাসকলাই চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার আর্থিক ক্ষতির পরিমান এখনো নিরপণ করা যায়নি।
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post