এনামুল হক কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়া খোকসা উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মাঠ কর্মকর্তা রাসেল ও নিরাপত্তা প্রহরী ইমরুলের বিরুদ্ধে ।
এদিকে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিবেদককে জানান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা, নিরাপত্তা প্রহরী ও ঠিকাদার মিলে প্রতিটি ঘরের অর্ধেক বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকৃত যোগ্য কৃষকদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে কৃষকদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে যারা এই মডেল ঘর পেয়েছেন, তাদের অনেকের ঘরের নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি।
অথচ পেঁয়াজ উঠানো শেষ হয়েছে আরো প্রায় ২/৩ মাসে আগে। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। অন্যদিকে বরাদ্দ পাওয়া কৃষকদের প্রশিক্ষণের বরাদ্দের টাকা নিয়ে হয়েছে নয় ছয় এবং বিভিন্ন সময় আসা ঘরের মালামাল নিতেও দিতে হয়েছে ২ শত থেকে ৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, কৃষিবিপণণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে খোকসা ২০ টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা রাসেল বিশ্বাস ও নৈশ প্রহরী ইমরুলের যোগসাজশে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে এ সকল সরকারি ঘর। এছাড়া ঘরের ডিজাইন বিকৃত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘর নির্মাণে অথবা বিতরণের বিষয়ে কোন মতামত নেওয়া হচ্ছে না খোকসা উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের। এমনকি খোকসা উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসে নেই এ সকল ঘরের তালিকা।
সরেজমিনে দেখা যায় , ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ প্রতিটি ঘর বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, কাঠের বাটাম, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ৬টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা সংযুক্ত রয়েছে। মূলত ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকার কারণেই সংরক্ষিত পেয়াজ পঁচবে না। তাপমাত্রা ও অর্দ্রোতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। এই উপজেলার বেশিরভাগ ঘরের কাজ এখনও শেষ হয় নাই। ঘর করতে অনেক কৃষকে দিতে হয়েছে সিমেন্ট, বালি ও ইট। ঘরের পিলারের ঢালায়ে খোয়া ও রডেও করেছে অনিয়ম। প্রত্যেক কৃষকে ঘর তৈরীর মিস্ত্রিকে প্রায় মাস খানেক থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ঘরের কাঠ বাশ ও অন্যান্য সামগ্রিক নিতে দিতে হয়েছে ২ শত থেকে ৫ হাজার। টাকা প্রতিটি ঘরে সংরক্ষণ করা যায় ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ মণ পেঁয়াজ ও তিনটি আলাদা আলাদা স্তরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন অন্তত ১০ জন কৃষক। কিন্তু রাখছেন মাত্র একজন কৃষক। এ ঘরে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকে। পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের দেশীয় মডেল ঘরের আশায় পেঁয়াজ চাষিরা তাদের পুরাতন ঘর মেরামত না করায় অনেকের অনেক মন পিয়াজ নষ্ট হয়েছে।
এখন পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
খাগরবাড়ীয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ রায় বলেন, এই ঘর সংরক্ষণ করা কঠিন। কারণ টেকসে না যে কাঠ দিয়েছে নাট দিয়ে লাগিয়েছে সব ব্যাকা হয়ে ভেঙেচুরে পড়ে যাচ্ছে এক মাসের মধ্যে। এ ঘর দেখতে আসলেই চা খরচ তেল খরচ দেয়া লাগে তাদের। এই ঘরের কাঠ বাশ এসব নিয়ে আসতে আমার ১০০০ টাকা ভ্যান ভাড়া লেগেছে। ঘর করতে পাঁচ বস্তা সিমেন্টও দেওয়া লেগেছে। রাসেল আর ইমরুল আমার কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা নিয়েছে। তবে এই টাকাটা আমি একবারে দিইনি বিভিন্ন সময় মালামাল আসে আর সেই মালামালের বাবদ নিয়েছে। ট্রেনিং এর সময় আমাদের পিডি স্যার বলেছিল যে রাসেল কিছু নিতে পারে আপনারা কিছু মনে করবেন না।
ঈশ্বদি গ্রামের দিবাকর সরকার প্রতিবেককে জানান, ঘরে পিয়াজ নাই দিতে সব ভেঙেচুরে যাচ্ছে। ঘর নিতে খরচের কথা জিজ্ঞেস করলে বলেন, খরচ টরসতো দেয়া লাগেই। যেমন ঘর উঁচু করে দেয়া বাবদ ৭ হাজার টাকা নিয়েছে। ঘর দাবা ছিল তাই উঁচু করে দেয়ার কথা বলে রাসেল ৭ হাজার টাকা নিয়েছে । পাঁচ বস্তা সিমেন্ট দিয়েছিলাম। ঘর করতে যে খেপসে খেপসে কিছু টাকা দিয়া লাগছে। কাট কাবারি বাশ এসব আমরা খোকসা থেকেই ভ্যান ভাড়া করে নিজের নিয়ে আসা লেগেছে। আবেদন করতেও আমার ১ হজার টাকা খরচ হয়েছিল। মিটার টিটারন, ত্রিপল এসব ফ্যান নিয়ে আসতেই ৫ হাজার করে টাকা দিয়া লেগেছে। এটা নাকি সরকারিভাবেই দেয়া লাগে। এমনকি সাইনবোর্ড নিয়ে আসতেও আমার ২ শত টাকা দেয়া লাগেছে।
অন্য আরেক কৃষকের ছেলে হাসিব বলেন, ঘর নিতে একেবারে কিছু লাগেনা তা না কিছু টাকাতো খরচ হয়। আমরা ২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম খুশি হয়ে রাসেলের হাতে। কাঠ বাশ এই সব ইমরুলের বাড়ি থেকে আমার আনা লেগেছে। অনেক কারণ আছে যার কারণে আমাদের খরচটা কম লেগেছে।
বেতবাড়িয়া গ্রামের আবু সাইদ প্রতিবেদক বলেন, এই কাজ করতে আমার তিন বস্তা সিমেন্ট দিতে হয়েছে। ট্রেনিংয়ের বিষয়ে বলেন আমরা দুই ভাই বাড়িয়ালারা দুইজন মেয়ে জামাই একজন শরীকের ভেতরের একজন।
বামনপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার এদের উপর থেকে মন উঠে গেছে কারন হচ্ছে এদের ঘরের আসায় আমারনপ্রায় দেড়শ মন পিয়াজ পচে হয়েগেছে। ঘর করতে আমি দুই বস্তা সিমেন্ট দিছি। আমার এখানে অন্য কোন সুযোগ আমি দিয়নি বলে আমার ঘর হতে দেরি হচ্ছে বা ঠিকমত হচ্ছে না। আমার ফুফাতো ভাই রানার টার শুধু পোল দাড়িয়ে আছে ঠিকমতো হয়নি। ওইটাও আমি দেখাশোনা করছি বলে হয়তোবা এমন হচ্ছে।
মুকশিদপুর গ্রামের এনমুল বলেন, ঘর করার আগে বলেছিলো পিয়াজ উঠার সময় শেষ হয়ে যাবে কিন্তু পিয়াজ উঠে গেলেও ঘর এখনও হয়নি।
ঘর ভালো করে করতে বলেছিলো কিছু বেনিফিট দিলেপারে ওই ধরেন ৫ হাজার টাকা দিলে রড একটু বাড়ায়ে ঠিক করে দিবো। কিন্তু এই সব করতে পারিনি বলে আমার ঘরের এই দশা। ঘরের সব ফ্রী বলে এখন আবার তারাই বলছেন কিছু দেয়া লাগবি তালি আর কি করব।
বনগ্রামের মঞ্জেল বলেন, ইমারুল ঘর নেওয়ার সময় আমাকে বলল ঘর পচ্ছেন আমাকে খুশিটুসি করে কিছু দিবেনা। ইমরুল কে জানতে

Discussion about this post