নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার মাধ্যমে বি ত কুষ্টিয়া জেলাবাসীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক অধ্যায়ের সুচনা হয়েছে। এতে সমগ্র দেশের সাথে সহজ নিরাপদ আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী যানবাহন সুবিধার আওতায় রেল যোগাযোগকে সত্যিকার অর্থেই এক যুগান্তকারী অধ্যায় মনে করছেন জেলাবাসী। অথচ এই রেলওয়ের আইন শৃংখলা বাহিনীর ঢিলেঢালা নিরাপত্তায় বেপরোয়া পকেটমার চক্র। অভিযোগ উঠেছে এই চক্রটি প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত করে চলেছে রেল ভ্রমনকারী যাত্রীদের। এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ করেও ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রী সাধারন কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগকে ঢালাও হিসেবে উল্লেখ করে রেল পুলিশ জানান, রেলে চুরির ঘটনায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই সেটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহন করে তার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় আদালতে।
কুষ্টিয়াস্থ রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দপ্তর ও পোড়াদাহ এবং রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে পোড়াদাহ রেলওয়ে থানাধীন অ লে সংঘটিত ২১টি চুরি, ০৬টি মাদক ও ০৩টি চোরাচালানের ঘটনায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। এসব মামলাগুলি তদন্তাধীন আছ। একই ভাবে রাজবাড়ি থানা এলাকায় ০৩টি চুরি এবং ০২টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই রেল পুলিশ বাদি হয়ে করা মামলা। পশ্চিমা ল রেলের খুলনা জোনের মধ্যে রেল যাত্রীদের টাকা পয়সা ও মালামাল চুরির ঘটনায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা হয়েছে পোড়াদাহ রেলওয়ে থানায়। যদিও বাস্তবে এই অ লে রেল যাত্রীদের মালামাল চুরির সর্বমোট ঘটনার ১০% ভাগও মামলার আওতায় আসেনি বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
ক্ষতিগ্রস্ত রেলযাত্রীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়ন করলেও তেমন কোনো কাজে আসছে না। পদ্মা সেতু হয়ে পশ্চিলা ল হতে ঢাকা গামী ট্রেন চালু হওয়ার পর থেকে গত ২ মাসে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী অন্তত: ২০ জন রেলযাত্রীর পকেট মারের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পকেট মার চক্রটি প্রায় প্রতিনিয়তই যাত্রীদের সর্বস্ব চুরি করলেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী কুষ্টিয়া শহরের মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মাইটিভির কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক হাওয়া প্রত্রিকার সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চুর অভিযোগ, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন থেকে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেসে ওঠার সময় পকেট মার চক্র রেলের দড়জায় ভীড় সৃষ্টি করে আমাকে একরকম ঠেসেধরে মানি ব্যাগটি বের কওে নেয়, বিয়টি আমি যখনই টের পেয়েছি ওই পকেটমার তখন চলন্ত ট্রেন থেকেই বাবর আলী গেইট এলাকার সিগনালের নিকট লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে যায়’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে কর্মরত এক নিরাপত্তা কর্মী জানায়, ‘ প্রায় প্রতিদিনই টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে ১০/১২ জন সদস্যের একটি পকেটমার চক্র কোর্ট ষ্টেশন থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত সংঘবদ্ধ ভাবে চলা ফেরা করে। তারা কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে যাত্রী বেশে ট্রেনে ওঠা ও নামার সময় ট্রেনের কামরায় গেটে প্রচন্ড ভীর সৃষ্টি করে পকেট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী রেলে অপরাধে জড়িত এই চক্রটিকে সনাক্ত করা গেলেও কোন এক অদৃশ্য কারনে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
এভাবে গত ২৩ ডিসেম্বর রেলযাত্রী আব্দুল হালিম, ২৪ ডিসেম্বও সরোয়ার হোসেন ও ২৭ ডিসেম্বর খালিদ হোসেন নামক ব্যাক্তিগণের পকেট কেটে টাকা বের করে নেয় পকেট মার চক্র। এভাবে গত দুই মাসে কেবলমাত্র কুষ্টিয়াতেই রেলযাত্রীদের ২০টি পকেটমারের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ আছে বলে জানান কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশন মাস্টার ইতিয়ারা খাতুন।
কুষ্টিয়াস্থ রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান জানান, ‘রেলওয়ের পুলিশের কাজই হলো- রেলযাত্রী ও রেলওয়ে সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষা করা। কোন যাত্রীর টাকা-পয়সা গয়নাগাটি বা মালামাল রেলভ্রমনের সময় চুরি হয়েছে এমন কোন অভিযোগ পেলেই সেঘটনায় মামলা হয়। তবে সব ঘটনায় রেল পুলিশের কাছে আসে এমন কথাও নিশ্চিত করে বলা যায় না’। কারণ চলতি পথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা পুলিশের কাছে আসতে চায় না’।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য,২৯ জানুয়ারি ২০২৪
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post