নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ায় আমিরাত লুবে অয়েল কোম্পানীর কর্মী জাহাঙ্গীর আলমের (৪০) রহস্যজনক মৃত্যুর ময়না তদন্ত রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসেছে। ময়না তদন্তের প্রাপ্ত রিপোর্টের তথ্যমতে পুলিশ মৃত্যু ঘটনাটি নিশ্চিতভাবে আত্নহত্যা বলে জানালেও জাহাঙ্গীরের পরিবারের দাবী এটি আত্নহত্যা নয়, জাহাঙ্গীরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ময়না তদন্ত রিপোর্টটি সঠিক নয় দাবী করে সংক্ষুদ্ধ পরিবারের পক্ষে সুবিচার চেয়ে সম্প্রতি কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (সদর) আমলী আদালতে মামলা দাখিল করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানাযায়, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার দিগর বাইদ গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম আমিরাত লুবে ওয়েল কোম্পানীর কর্মী হিসাবে কুষ্টিয়ায় কর্মরত ছিলেন।
চাকরীর সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া শহরের কমলাপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যাসহ বসবাস করতেন। মামলার বাদীর দাবী ২০২৪ সালের ৬ মার্চ সকাল আনুমানিক পৌনে ১১টা থেকে পৌনে ১২ টায় ভাড়া বাড়ির ভেতরে পরিকল্পিতভাবে ভাড়াটিয়া খুনিরা জাহাঙ্গীরকে হত্যার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখে।
ঘটনার দিন সকাল ১০ টারদিকে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী রুবিনা বাড়ি তালাবদ্ধ করে একসাথে বেরিয়ে যান। জাহাঙ্গীর কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত কোম্পানীর ম্যানেজার (মার্কেটিং এন্ড সেলস) মাহাবুবুর রহমান জাহিদের সাথে দিনভর মার্কেটিং কাজের উদ্দেশ্যে যান এবং স্ত্রী রুবিনা ছুটি শেষে মাদ্রাসা পড়–য়া মেয়েকে আনতে রওনা হন।
পরবর্তীতে বেলা পৌনে ১২ টারদিকে স্ত্রী রুবিনা বাড়ির তালা খুলে ভেতরে প্রবেশের পর ঘরের ফ্রীজের কোনায় লোহার এ্যাংগেলের সাথে জাহাঙ্গীরের গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান। এসময় তার আর্ত-চিৎকারে বাড়িওয়ালার ছেলে হারুন-অর-রশীদসহ প্রতিবেশীরা ছুটে এসে লাশ উদ্ধারের পর কুষ্টিয়া ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় পুলিশ বাদী একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত রিপোর্ট পুলিশের হাতে এসে পৌঁছে। কিন্তু ওই রিপোর্টে ঘটনাটি আতœহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এতে সংক্ষুদ্ধ ওই পরিবারের পক্ষে আবু হানিফ মিয়া আদালতে সিআর পিটিশন দাখিল করেছেন।
মামলার বাদী জাহাঙ্গীরের চাচা আবু হানিফ মিয়া পিটিশনে সন্ধিগ্ধ আসামী আমিরাত লুবে কোম্পানীর ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জাহিদসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনেন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবিনার বরাত দিয়ে পিটিশনে বাদী আরো উল্লেখ করেন, মত্যু ঘটনার মাস দেড়েক আগে সন্ধিগ্ধ আসামী জাহিদ কোম্পানীর লেভেল-প্যাকেজিং ঠিকঠাক রেখে নিন্মমানের ওয়েল বাজার জাতকরন ও বিক্রিত টাকার অংশ ভাগাভাগি করে নিতে জাহাঙ্গীরকে অসৎ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে জাহাঙ্গীর রাজী না হওয়ায় কোম্পানীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাহিদ জাহাঙ্গীরের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন।
এছাড়া গালাগালিসহ হুমকি দেয়ায় জাহাঙ্গীর চাকুরী ছেড়ে কথা স্ত্রী রুবিনাকে জানিয়েছিলেন। আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারামতে এজাহার (এফআইআর) হিসাবে গন্য করে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসিকে আদেশ প্রদানসহ আদালতে সুবিচার প্রার্থনা করেন মামলার বাদী আবু হানিফ মিয়া। মামলাটির শুনানী এখনো হয়নি। আদালতে শুনানীর পর বিচারক এবিষয়ে পরবর্তী আদেশ দিবেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্র জানিয়েছে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২২ এপ্রিল ২০২৪

Discussion about this post