ছাদ বাগান কেবলমাত্র ঢাকায় নয় কুষ্টিয়াতেও শুরু হয়েছে।কুষ্টিয়ার কুমকুম ফার্মেসীর মালিক শিশিত কুমার ও তুলিকা বিশ্বাস তাদের বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন আদর্শ এক ছাদ বাগান।
কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় ৬তলার বাড়ীর ৩ হাজার ২শ স্কয়ার ফিট ছাদে এই বাগানের অবস্থান। দৈনিক দেশতথ্যের পক্ষ থেকে ওই বাগানে গিয়েছিলাম। বাগানের চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো ছোটবড় টবে রাখা সুসজ্জিত ফুল-ফল, সবজিসহ নানা ধরণের ওষধি গাছ। ছাদের যেদিকে চোখ যায়- শুধু গাছ আর গাছ। সবুজ পাতার আড়ালে ফুলে-ফলে ছেয়ে আছে চারপাশ। দেয়ালে ঝুলছে সজীব লতা। তাতে ফুটেছে নানান রঙের ফুল। সারি সারি গাছগুলো নজর কাড়ে খুব সহজেই। দেশি-বিদেশি জাতের ফল, ফুল ও শোভাবর্ধন গাছসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির গাছ। মিটছে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা।
কলেজপড়ুয়া সন্তান তিলোত্তমাসহ ছাদ বাগানের পরিচর্যা করে সময় কাটান এ দম্পতি। শখের বসে গড়া এ ছাদ বাগানের সমারোহ উপভোগ করেন পুরো ফ্ল্যাটের বাসিন্দাসহ তাদের স্বজনরাও। এছাড়া ছাদ-বাগান কৃষি কর্ম-কৌশল দেখতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বৃক্ষমোদী মানুষ। নান্দনিক বাগানে মুগ্ধতায় কাটে অনেকের অপেক্ষার প্রহর। বাড়ির ছাদে ফল-ফুল ও শাক-সবজির বাগান গড়ে তুলে সাড়া ফেলেছেন তারা।
শিশিত-তুলিকা ব্যবসায়ী দম্পতির শহরের এনএসরোডে কুমকুম ফার্মেসী নামের একটি ওষধের দোকান রয়েছে। সবুজে ঘেরা এই বাড়িটি জেলা শহরের মধ্যে একেবারেই ভিন্নরকম।
শহরের থানাপাড়া লরেন্সলেন এলাকার বাড়িটিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস কুষ্টিয়ার স্বনামধন্য ওই ব্যবসায়ী দম্পতির। বৃক্ষপ্রেমী মানুষের কাছে বাড়িটি এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সৌখিন এই দম্পতির দেখাদেখি অনেকেই ছাদ বাগানে আকৃষ্ট হচ্ছেন। শহরের বাড়িতে বাড়িতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সৌখিন বাগান ও ছাদ-কৃষি।
বাড়ীর ছাদে প্রথমে কিছু ফল-ফুলের গাছ দিয়ে শুরু করেন। পরে ছাদ ভরে তুলেন সৌখিন বৃক্ষরাজিতে। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে গাছগুলো হয়ে ওঠে তাদের জীবনেরই অংশ। পরিচর্যা করতে কখনো কখনো শ্রমিকদের নেওয়া হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ আয়তনের এ ছাদ বাগানে রয়েছে হরেক রকমের সবজি, ফল, ফুল, মশলা ও ঔষধি গাছ। বেশ কয়েকটা ট্রেতে মাটি ভর্তি করে সেখানে সরিষা ফুল এমনকি কলাগাছেরও দেখা মিলেছে এই ছাদ বাগানে।
সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো, লাল শাক, সবুজ শাক, কলমি, লাউ, সিম, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, স্কয়াশ, পটল, গাজর, সরিষা,মিষ্টি আলু, আলু, মুলা, করলা, মিষ্টি কুমড়া, মশলার মধ্যে রয়েছে আদা, মরিচ, চুইঝাল, দারচিনি, এলাচ, পুদিনা, তেজপাতা, ফলের মধ্যে রয়েছে বারোমাসি আমড়া, বারোমাসি থাই পেয়ারা, সীডলেস পেয়ারা, দেশি ডালিম, আপেল, কাগজী লেবু, সীডলেস লেবু, মাল্টা, কমলা, নাগপুরি কমলা, চায়না কমলা, বারী-১ মাল্টা, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, গোলাপজাম, লঙ্গনফল, কাশমেরী আপেল কুল, বাউ আপেল কুল, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, কদবেল, ছবেদা, পেপে। স্ট্রবেরি, আপেল গাছের পরিচর্যা ফুলের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন ধরনের গাঁধা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, ক্যামেলিয়া, জবা, এ্যাডেনিয়াম, জুই, করবী, মাধবীলতা, ডালিয়া, কলাবতী, কসমসসহ আরও বেশ কিছু জাতের ফুলের গাছসহ শোভাবর্ধন গাছে যে কেউই পুলকিত হতে হবে।
ছাদের উপর প্লাষ্টিকের ব্যারেলে, মাটির চাড়িতে ও বিভিন্ন ধরনের টবে মাটি দিয়ে গাছগুলি লাগানো হয়েছে। গাছগুলি কলমের হওয়ায় একেবারেই ছোট অবস্থায় এবং অল্পদিনে পর্যাপ্ত পরিমান ফুল ও ফল ধরছে। দৃষ্টি নন্দন আদর্শ ছাদ বাগানের অন্যতম আকর্ষন হচ্ছে সম্পূর্ণরূপেই কীটনাশক মুক্ত পদ্ধতিতে চাষাবাদ।
তুলিকা বিশ্বাস জানান, প্রথম দিকে তিনি সৌন্দর্য বর্ধন ও সময় কাটানোর জন্য ছাদে ফুল গাছ লাগান। পরে তার স্বামীর উৎসাহ, সহযোগিতা ও পরামর্শে নানা ধরনের ফল,সবজি ও ঔষধি গাছ লাগান।
তিনি জানান, নিজেরা বিষমুক্ত ফল ও সবজি খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশি ও নিকট আত্মীয়দের মাঝে এ বাগানের ফল ও সবজি বিলিয়ে তিনি আত্মতৃপ্তি পান। অন্যদের বাগান করার ব্যাপারেও সহযোগিতা করে থাকেন বলেও জানান তিনি। নিরাপদ ফল ও সবজি পাচ্ছি, পাশাপাশি ছাদবাগান থেকে প্রকৃতিতে সরবরাহ হচ্ছে অক্সিজেন। প্রতিটি ছাদবাগান হয়ে উঠেছে একেকটি অক্সিজেন চেম্বার। শৌখিনতার পাশাপাশি পরিবারের পুষ্টির চাহিদাও মিটছে।
শিশিত কুমার বিশ্বাস বলেন, আমার ছাদবাগানে প্রায় শতাধীক প্রজাতির বিভিন্ন ফুল-ফল, ওষধি গাছ রয়েছে।পুরো প্রাকৃতিক উপায়ে সার, বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থবিহীন সবজি ও ফলের জন্য এবং বাজার থেকে যাতে সবজি বা ফল কিনতে না হয়, সেজন্য মূলত ছাদবাগান গড়ে তোলা হয়। দিন দিন পৃথিবীতে সবুজায়ন কমে যাওয়ায় অক্সিজেন কমছে। চারপাশে ইট-পাথরের কাঠামো গড়ে উঠছে। সবুজ এখন পাওয়াই যায় না। বলতে গেলে ছাদবাগান গড়ার পেছনে নিজের আঙিনায় সবুজ দেখার উদ্দেশ্যও রয়েছে। আমার কাছে মনে হয়, শহর বা গ্রামের প্রতিটি ছাদে ছাদবাগান গড়ে তুললে পৃথিবীর অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
সদর উপজেলা পৌর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসিম রেজা জানান, ছাদে বাগান করলে তার পরিচর্যা ভূমির বাগানের চাইতে একটু বেশি করতে হবে। সময়মতো পানি না দিলে গাছ মারা যেতে পারে। বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি ছাদে বাগান করতে চান তাহলে তাকে সহায়তা করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুধু ছাদ নয়, বাড়ির বারান্দা, বেলকনিসহ যে অংশ খালি পড়ে আছে তাতেই লাগানো যাবে গাছ। তার জন্য দরকার সঠিক নিয়মের অনুসরণ।
এলাকার অনেকেই ওই ছাদ বাগান দেখতে এসেছেন। কেউবা পরামর্শ নিচ্ছেন ওইরকম একটি ছাদ বাগান করার জন্য। ছাদ বাগানে দাঁড়িয়ে শহরের মৌবনের এক কর্মকর্তা অরিক আহমেদ বলেন, তিনি মাঝে মধ্যে ছাদ বাগানটি দেখতে আসেন। নানা ধরনের ফল ও ফুলের সৌরভ তার খুব ভালো লাগে। তাই তিনি সুযোগ পেলে প্রতিবেশি ছাদ বাগানে ছুটে আসেন। অচিরেই তিনি নিজেও শিশিত কুমারের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে এরকম একটি ছাদ বাগান করবেন বলে জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, শিশিত-তুলিকা ব্যবসায়ী দম্পতির ছাদ বাগানটি একটি আদর্শ ছাদ বাগান। ছাদ বাগানের বড় সুবিধা নিজেরা নিজেদের পছন্দ মত সবজি ও ফল চাষ করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া যায়। সকলেরই উচিৎ বাড়ির ছাদে ও আঙ্গিনায় স্বল্প জায়গাতে এ ধরনের বাগান করা। তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া জেলা শহর ও উপজেলা শহরের ছাদবাগান বাড়তে শুরু করেছে। এখন জেলায় প্রায় প্রায় তিন শতাধিক বাড়ির ছাদে বাগান হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে ছাদবাগান সম্প্রসারণে বাগানিদের পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তারেক//দৈনিক দেশতথ্য//ডিসেম্বর ১৮,২০২৩//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post