ওপেলিয়া কনি, কুষ্টিয়াঃ
কুষ্টিয়ার বটতৈলে ১.০৫ একর জমির উপর ২ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৩ সালে নির্মিত হয় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র । ৬টি বিভাগীয় পর্যায়ের ৬টি সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মধ্যে খুলনা বিভাগীয় পুনর্বাসন কেন্দ্রটি কুষ্টিয়ার বটতৈলে স্থাপিত হয়। ১০০ জনের জন্য এ পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে ৩ হাজার বর্গফুটের একটি অফিস, প্রশিক্ষণ ও স্কুল ভবন, একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, ৮ হাজার বর্গফুটের দ্বিতল ডরমিটরী ভবন, ১ হাজার বর্গফুটের ২ ইউনিট স্টাফ কোয়ার্টার ও ৮শ’ বর্গফুটের ২ ইউনিট স্টাফ কোয়ার্টার, ৬৭২ বর্গফুটের ওয়ার্ডার্স ব্যারাক ও পাম্প হাউজ এবং ১হাজার ৩শ’ ৭০ ফুট বিস্তৃত সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সামাজিক প্রতিবন্ধী তরুণীদের বিভিন্ন অনৈতিক, ঘৃণিত ও বিপজ্জনক পেশা হতে উদ্ধার করে তাদের উপযুক্ত চিকিৎসা, নৈতিক সংশোধন, শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও আর্থ-সামাজিক পূনর্বাসনের লক্ষ্যে এ পুনর্বাসন কেন্দ্রের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
সমাজের বিপথগামী মেয়েদের এনে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাধ্যমে সমাজে পুনর্বাসন করা, মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অন্ন ও বস্ত্র সরবরাহ , সংশোধনী, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করে মানসিক ও মনস্তাত্বিক উৎকর্ষ সাধন এবং একই সাথে তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
কুষ্টিয়ায় সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে ২৮ জন মেয়ে নিবাসী রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বুদ্ধি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রয়েছে।
বর্তমানে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার এসব নাম পরিচয়হীন এতিম এবং সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী মেয়েরা বিপথগামী হয়ে নানারকম ঝুকিপূর্ণ ও ঘৃণিত পেশার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। যার কারনে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে এসমস্ত পূর্নবাসন কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হচ্ছে । এসব সুবিধাবঞ্চিত বিপথগামী মেয়েদেরকে সংশোধন করে নতুনভাবে সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্য এবং তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কুষ্টিয়া সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে দুইজন প্রশিক্ষক দ্বারা বিভিন্ন রকম হস্তশিল্পের কাজ শেখানো হচ্ছে।
এসব প্রশিক্ষণ নিয়ে নিবাসীরা জিরো সাইজের বাচ্চাদের পোশাক, ব্যাগ,নকশী পাপশ,নকশী কাথা,টেবিল ম্যাট,বেডশীট, ক্যানবেতী ব্যাগ, এপ্লিকের বেড শীট, বাটিক ও স্কিন প্রিন্টিংয়ের বেডশীট,থ্রী পিস,চটের ব্যাগ,চটের পার্স, চটের টেবিল রানার সহ অনেক ধরনের পোশাক ও ব্যবহার সামগ্রী তেরি করতে শিখেছেন। এখান থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে দুইজন নিবাসী বর্তমানে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে পোশাক সহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরির কাজ করছেন। এখান থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কাজের অভিজ্ঞতার কারনে নিবাসীরা হয়ে উঠছেন একেকজন উদ্যোক্তা। পাশাপাশি বিপদগামী রাস্তা ছেড়েও তারা নতুন করে আলোর পথের দেখা পাচ্ছে। তাদের মন-মানসিকতার উন্নয়নের জন্য একজন সাইকোলজিস্ট দ্বারা প্রতিনিয়ত কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে এই কেন্দ্রটিতে।
শুধু তাই নয় তাদেরকে নিরক্ষর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে নিযুক্ত শিক্ষক কুষ্টিয়ার এই কেন্দ্রটিতে বেতনভুক্ত থাকলেও তিনি বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন খুলনায় যার ফলে নিবাসীদের শিক্ষা প্রদান ব্যহত হচ্ছে। এই পূর্নবাসন কেন্দ্রটিতে একজন ডাক্তারও নিযুক্ত রয়েছেন তবে সেটা শুধুই নথিপত্রে সরেজমিনে গিয়ে কোনো ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় যে এখানকার কোনো নিবাসী অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে তাকে অটোরিকশা যোগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়াও এই কেন্দ্রটিতে সুন্দর প্রাচীর বেষ্টনী থাকলেও অপ্রতুল রয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পূনর্বাসন কেন্দ্রের ম্যানেজার ড. মোছাঃ নাজনীন নাহার বলেন, ”আমরা বিপদগামী মেয়েদেরকে পূনর্বাসনের জন্য কাজ করি। শুধু পূনর্বাসন করলেই চলবেনা পাশাপাশি আমরা তাদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও করছি। তবে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষা প্রদান ব্যহত হচ্ছে, তাই একজন শিক্ষক এখানে প্রয়োজন। মেয়েদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আমরা প্রশিক্ষক দিয়ে তাদের হাতের কাজ শেখাচ্ছি। তারা এখন নিজেরাই অনেক পোশাক তৈরি করছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দুজন এখন আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনেও কাজ করছে। আমরা শিক্ষা,স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান সহ তাদের পূনর্বাসন নিশ্চিত করছি। কারন এরা সবাই সুবিধা বঞ্চিত শিশু কিশোরী । এই পূর্নবাসন কেন্দ্রে অনেক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী আছে যারা অসুস্থ হলে নিজে থেকে ঔষধ বুঝে খেতে পারে না তাই তাদের জন্য একজন সেবিকা অতি আবশ্যক যা এখানে নেই। এই নিবাসীদের রান্নার জন্যও নেই কোনো রাধুনি যার ফলে কেন্দ্রে থাকা মেয়েদেরকেই রান্নার কাজটি করতে হয়। তাই এখানে একজন রাধুনীও আবশ্যক। এখানে সব রকম ব্যবস্থা থাকলেও লোকবল কম থাকায় কিছু কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। “
Discussion about this post