নিজস্ব প্রতিবেদক : সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুষ্টিয়া প্রায় ২’শ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজ ব্যপক দূর্নীতি আর অনিয়মের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আ লিক মহা সড়কটি প্রশস্থকরণ ও মজবুতিকরণ কাজ শেষ করলেও ৩ বছর যেতে না যেতেই ওই সড়ক ভেঙ্গে ধসে পড়ছে।
কুমারখালী থেকে পাংশা পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দে ভরে গেছে। আর এর ফলে যানচলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ঘটছে প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনা। গত বছর কুমারখালী বাস ষ্ট্যান্ডে সড়কটি মেরামতের জন্য দায়সারা কাজ করতে গেলে স্থানীয় জনগণ ও পৌর মেয়রে আপত্তির মুখে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পিছু হঠে। কুমারখালী বাসস্ট্যান্ডে প্রায় এক হাজার মিটার সড়কটি চলাচলে একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাস্তা ভেঙ্গে ক্যানালে পরিনত হলেও সড়ক বিভাগ রয়েছে নিরব। এক দেড় ফুট সড়ক দেবে ক্যানেলের রূপ নেয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারীরা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করছে, বিগত দেড়/দুই বছর ধরে এই মহাসড়কটির বেহাল দশা বিরাজমান। জনগুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আ লিক মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ঢাকাগামী অসংখ্য বাস, ট্রাক, টলি, অটো রিক্সা, পিকআপ ভ্যান, কর্ভাট ভ্যান, মটর সাইকেল ভ্যান রিক্সা শতশত যানবাহন চলাচল করে।
সড়কটি দেবে ও ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই সব যানবাহনগুলো চলাচল করছে চরমঝুকিতে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ওই ভাঙ্গা অংশ কয়েকবার মেরামত করলেও কোন কাজে আসেনি। প্রতিবারই লোক দেখানো দায়সারা মেরামত করে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলে অভিযোগও উঠেছে। যার ফলে মেরামতের মাস পেরোতে না পেরোতেই আবারও রাস্তা দেবে ভেঙ্গে খানাখন্দে ভরে যেয়ে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে।
সড়কটি মেরামতের দাবী তুলে পৌর মেয়রসহ এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসুচী পালন করেছে। তার পরেও সড়ক বিভাগের কোন টনক নড়েনি। বর্ষা আসার আগেই সড়কের যে বেহাল দশা তাতে বর্ষা আসলেই এই জনগুরুত্ব পূর্ণ সড়ক দিয়ে যান চলঅচল বন্ধ হয়ে যাবে। ভুগান্তিতে পড়বে সাধারণ জনগণ।
পরিবহন শ্রমিক আক্কাস আলী বলেন, আমরা যে কত বড় ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করছি তা বলার নেই । আমরা আর কতবার বলবো সড়ক বিভাগ বেহায়া তাদের নাখ কাটা কর্মকর্তাদের কারনেই সড়কের এই বেহাল দশা। অটো চালক রিফাত বলেন, আমরা গরীব মানুষ, সামান্য একটি অটো কিনে এই সড়কে ভাড়া মারি কিন্তু সড়কের যে অবস্থা অটো চালানো অনম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই এই সড়কে যাত্রী নিয়ে অটো উল্টে পড়ছে। এতে করে যাত্রীরা রাস্তায় পড়ে আহত হচ্ছে।
অটো ভেঙ্গে যাচ্ছে। তার পরেও পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে অটো চালাতে হচ্ছে। ট্রাক ড্রাইভার আশিক বলেন, এই সড়ক দিয়ে পরিবহন চলাচল করা একেবারই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মাল ভর্তি ট্রাক নিয়ে এই রাস্তায় আসলে এই মনে হয় ট্রাক উল্টে গেল। যদি এভাবে চলতে হয় তা হলে পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা।
রাস্তার পাশের এক মুদি দোকানদার বলেন, আমরা সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকি। মনে হয় কখন যেন পরিবহন উল্টে আমাদের দোকানের উপর পড়ে। সড়ক বিভাগ মাঝে মধ্যে এসে লোক দেখানো কিছুটা মেরামত করে চলে গেলেও সপ্তাহ খানেক না যেতেই আবারও আগের মত রাস্তা দেবে বসে খানাখন্দে ভরে যাচ্ছে। কুমারখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ মাহমুদ বলেন, এই সড়ক নিয়ে বহুবার লেখা লেখি হয়েছে তার পরেও কোন কাজ হয়নি। যখনই আন্দোলন শুরু হয় তখনই লোক দেখানো মেরামত শুরু করে সড়ক বিভাগ। আর ওই মেরামত কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবারও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এমন ভাবে মেরামত করছে যা টেকসই হচ্ছেনা। অথচ মেরামতের নামে সড়ক বিভাগ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের পকেট ভরছে। তিনি বলেন অবিলম্বে এই জনগুরুত্বপূর্ণ কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আ লিক মহা সড়কটি মজবুত করে মেরামতের মধ্যমে চলাচলের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা যাবে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, এই সড়কটি বার বার ক্ষতিগ্রস্থ অংশটি মেরামত করেও টেকসই হচ্ছেনা। ক্ষতি গ্রস্ত অংশটুকু ঢালাই করে মেরামতের পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২২ টনের রাস্তা দিয়ে ৫০ টনের পরিবহন চলাচল করছে। এই পরিবহন আবার ব্রেক করলে ১২০টন হয়ে যায়। এতে করে রাস্তার ধারণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রাথমিক ভাবে ঢালাইয়ের কাজ করার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। বাজেট বরাদ্দের পর ঢালাই দিয়ে সংস্কারকাজটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে করে রাস্তা টেকসই ও মজবুত হবে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ১৮ মে ২০২৪