জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম এর একটি বিজ্ঞাপন চিত্র টিভি চ্যানেলে আমরা প্রায়ই দেখি। ঐ বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনেতা মোশারফ করিম কে বলতে শোনা যায়, “জনপ্রতিনিধি হয়ে যদি এক কাপ চা বানিয়েই না খাওয়াতে পারি, তবে জপ্রতিনিধি হয়ে লাভ কি” এবার আর বিজ্ঞাপন নয়, বাস্তবেই এমন একজন জনপ্রতিনিধির সন্ধান মিলেছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের।
শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা আসনের ইউপি সদস্য মোছাঃ ফরিদা খাতুন স্বামী সন্তান নিয়ে টানাপোড়নের মধ্য দিয়েই চলে তিন সদস্যের ছোট সংসার।একজন ইউপি সদস্য হয়েও চা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জনপ্রতিনিধি হিসাবে ভালো কাজের অবদান রাখায় দুবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন ফরিদা। ব্যস্ততার মাঝের সামলাতে হয় নিজ কর্মসংস্থান ও চায়ের দোকান।একজন ইউপি সদস্য হয়ে সাদামাটা ভাবে জীবন যাপন করছেন তিনি।
উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বশোয়া গ্রামের বাসিন্দা মোছাঃ ফরিদা খাতুন জীবন জীবিকার তাগিদে স্থানীয় বশোয়া বাজারে চা এর দোকান চালান। গ্রামের মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসায় ২০১৭ সালে প্রথম বার এবং ২০২২সালে দ্বিতীয় বার ইউপি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি ।
মোছা:ফরিদা খাতুন বুলেন,গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এলাকার লোকজনের সম্মতিতে আমি ইউপি সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন করি। নির্বাচনে এলাকার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচার প্রচারণা চালান এবং খরচ বহন করে।
এই নারী ইউপি সদস্যে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একটি দো’চালা ছোট টিনের ঘরে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দোচালা টিনের ঘড় ছাড়া তার আর কোন জাইগা জমি ও নাই।
অর্থ বিত্তহীন এই সংগ্রামী নারী একজন চা বিক্রেতা হয়েও কেন এত জনপ্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে, স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ফরিদা খাতুন একজন সৎ মানুষ, মানুষের বিপদে আপদের কথা শুনলে রাত বিরাতে তিনি ছুটে যান, নিজের বাবার বাড়ির জমি বিক্রি করে গ্রামের মানুষের জন্য রাস্তায় মাটি ফেলে রাস্তা মেরামত করেছেন। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করেন তিনি।
বাইরে মিটিং থাকে সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দোকান খুলে ঘণ্টাখানেক ব্যবসা করে চলে যাই। বাইরে কাজ শেষে আবার বিকেলে দোকান খুলতে হয়। কারণ চায়ের দোকান ছোট একটি অফিসের মত। লোকজন আসে তাদের নানান সমস্যা নিয়ে। চা বিক্রির পাশাপাশি তাদেরও সমস্যার সমাধান করতে হয়।
এক বেলা দোকান না খুললে ঘুরে যেতে হয় মানুষকে। এতে মানুষ কষ্ট পায়। জনগণ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছেন তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চাই।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ কুদ্দুস বলেন,মোছাঃফরিদা খাতুন একজন দায়িত্ববান জনপ্রতিনিধি।তিনি তার সব দায়িত্বই ঠিকঠাকভাবে পালন করেন। সে জন্য তিনি অন্য সহকর্মীদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। তিনি সব শ্রেণি পেশার মানুষরে সঙ্গে খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন। তাকে নিয়ে পুরো পরিষদ গর্বিত।সে খুবই গরীব মানুষ, মানুষ হিসেবে ভাল।আমার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করি।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৮ জুন ২০২৩
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post