নিজস্ব প্রতিবেদক : দন্ত চিকিৎসার নামে কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডে অবস্থিত প্রাইম ডেন্টাল কেয়ারে চলছে প্রতারণা। অভিযোগ রয়েছে, প্রাইম ডেন্টাল কেয়ারের মালিক ডা. মো: ওয়ারেশ করণী (রকিবুল) এর ডিগ্রি নেই কিন্তু তারপরও তিনি নিজেকে ডাক্তার, ডেন্টিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, কনসালটেন্ট, প্রযুক্তিবীদ পরিচয় দিয়ে ভুয়া সনদ নিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে রমরমা ব্যবসা করছেন। প্রতারিত হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসার কারণে অনেকেই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত।
সরেজমিন কুষ্টিয়া শহরের এনএস রোডের পাবলিক লাইব্রেবীর সামনে ২য় তলায় গিয়ে দেখা যায় প্রাইম ডেন্টাল কেয়ার’ নামের একটি সাইন বোর্ড ঝুলছে। সাইন বোর্ডে লেখা আছে ডেন্টিষ্ট মো. ওয়ারেশ করণী (রকিবুল), ডি.ডি.টি (ঢাকা), বি.ডি.এ (ঢাকা), মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসাই প্রযুক্তিবীদ সহ আরও রয়েছে নানা পদবি। ক্লিনিকটির ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে এক রোগীর দাঁতের চিকিৎসা করছেন এই চিকিৎসক। বাইরে অপেক্ষা করছেন আরও দুজন। তারা জানেন না, মো. ওয়ারেশ করণী (রকিবুল), প্রকৃত ডাক্তার নাকি ভুয়া।
কি কি চিকিৎসা সেবা দেন- জানতে চাইলে মো. ওয়ারেশ করণী (রকিবুল) বলেন, ‘স্থায়ী ও অস্থায়ী ফিলিং, লাইট কিউর মেশিনে ফিলিং, পলিসিং, আকাঁ-বাঁকা দাঁত সোজা করা, দাঁত উঠানো, দাঁত বাধানো, রুট ক্যানেল, সিস্ট অপারেশনসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করেন। রোগীর প্রকার ভেদে ২ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাইন বোর্ডে লেখা অনুযায়ী মুখ ও দন্ত রোগ চিকিৎসাই প্রযুক্তিবীদ সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. ওয়ারেশ করণী (রফিকুল) বলেন, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি দিয়ে দন্ত চিকিৎসা করে থাকেন, তাই তিনি দন্ত চিকিৎসাই প্রযুক্তিবীদ।
সম্প্রতি এ ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন কুষ্টিয়া শহরের এক সেবা প্রত্যাশী । তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র সহ বিভিন্ন রকমের দন্ত চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা। কিন্তু তার রোগ মুক্তি হওয়া তো দূরের কথা আরো নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো। ফলে অন্যত্র চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন তিনি।। একইভাবে আরও অনেকে প্রতারিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওয়ারেশ করণী (রফিকুল) বলেন, আমার ঠিক মনে পড়ছে না ওই রোগীর কথা। তবে রোগীর কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের কাছে আকুতি জানায়।
এদিকে, কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ডেন্টাল সার্জন জানায়, হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে হেপাটাইটিস, সিফিলিস, গনোরিয়া ও ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রন্ত হচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন জানান, যদি কেউ নামের আগে ডাক্তার লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন তাহলে তাকে এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। এরপর বিএমডিসিতে আবেদন করলে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার পর রোগী দেখতে পারবেন। এছাড়া রোগী দেখা আইনত নিষিদ্ধ। কয়েকটি দন্ত চিকিৎসালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Discussion about this post