কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিম-এর আওতায় পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. একরামুল হক সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সাধন কুমার বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো. নাজমুল হোসাইন, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া। জনাব সালমা সুলতানা, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। এছাড়াও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংগঠকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহের পাঠের মাধ্যমে সকাল ১০:০০টায় ‘উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা’ শুরু হয়। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব সালমা সুলতানা অনুষ্ঠানের কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব সালমা সুলতানা অনুষ্ঠানের কর্মশালার বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন- শিক্ষার্থীদের মাঝে বই পড়ার প্রবনতা কমে গেছে, তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে। একটি জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭৭% শিক্ষার্থী ফেজবুকে আসক্ত হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বই পড়তে আগ্রহী করতে শিক্ষকদের ভূমিকা পালন করতে হবে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র কর্মপরিকল্পনা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন জনাব আব্দুলাহ মুহাম্মদ কুরাইশী, টিম ম্যানেজার, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। তিনি বলেন, উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার অন্যতম উদ্দেশ্য মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তাদের মন এবং বয়স উপযোগী বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলা। পাঠাভ্যাসের প্রসার ও সুযোগ বৃদ্ধি করা। কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, বইপড়া শেষে মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুরস্কার প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাইব্রেরি টেকসই ও কার্যকর করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। বইপড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আজকের এই কর্মশালা।
প্রধান অতিথি ছিলেন জনাব সাধন কুমার বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। তিনি তার বক্তব্যে বলেন আজকের এই কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই তা হলো বই পড়তে হবে। আমরা পড়ার মানসিকতা থেকে দূরে সরে গেছি। শিক্ষার্থীদের কি ভাবে পড়তে আগ্রহী করা যায় তা এই কর্মশালার থেকে আমরা জানবো। মানুষ গড়ার কারিগড় হিসাবে সকল শিক্ষকদের কাজ করতে হবে। যে উদ্দেশ্যে আমরা আজ এই কর্মশালায় একত্রিত হয়েছি, সেই উদ্দেশ্য যদি আমরা সফল করতে পারি তবে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির সমন্বয়কারী মো. মসিহুর রহমান কর্মসূচির বার্ষিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন- প্রিয় সংগঠকবৃন্দ (সহকারী শিক্ষক ও সহকারী গ্রন্থাকারীক) আপনারা কর্মসূচির প্রাণ। আপনারা ম্যানুয়াল অনুয়ায়ী কর্মসূচিটি পরিচালনা করবেন। তিনি সকলের সুস্বাস্থ কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, জনাব মো. নাজমুল হোসাইন, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। তিনি বলেন- বই পড়ার মাধ্যমে চিন্তা চেতনায় এগিয়ে যাওয়া যায়। বই আমাদের চিত্তকে বিকাশিত করে। শুধু শিক্ষিত হলেই মানবিক হওয়া যায় না, বই পড়ার মাধ্যমে মানবিক হওয়া যায়। বই পড়ার আনন্দ প্রাপ্তির মাধ্যমে মস্তিক ফ্রেশ হয়, সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে হলে এবং মুক্তি পেতে হলে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন- জনাব জেব-উন-নিসা, প্রধান শিক্ষক, কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। প্রধান শিক্ষক বলেন- স্বাধীনতার প্রায় ৪০ বছর পর সরকার পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি নামক বই পড়ার কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচির হাত ধরে আমি সহ শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করবো। আমরা শিক্ষকেরা সবাই পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনায় নিবেদিত ভাবে অংশ নিবো। আমি এই কর্মসূচির সাফল কামনা করছি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ তারিকুর রহমান, অধ্যক্ষ, কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসা। তিনি বলেন- বইয়ের মধ্য থেকে জ্ঞান এক প্রজন্ম অন্য প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। প্রজন্ম গঠনে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় অভ্যস্থ করতে শিক্ষকদের ভূমিকা পালন করতে হয়।
কর্মশালার সভাপতি হিসাবে জনাব মোঃ একরামুল হক সরকার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, কুষ্টিয়া সদর, কুষ্টিয়া। তিনি তার আলোচনায় বলেন- বই সবাই পড়তে পারে না, এর জন্য অভ্যাস গড়া প্রয়োজন। সফল মানুষ হতে হলে আমাদের বই পড়ার অভ্যাস থাকতেই হবে। প্রতিটি লাইব্রেরীতে কমপক্ষে দুই হাজারটি বই থাকতে হবে। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ, এই কর্মসূচিকে আমাদের সকলকে সফল করতে হবে। এর জন্য সকল শিক্ষককে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি এই কর্মসূচির সাফল্য কামনা করে কর্মশালার পরিসমাপ্তি ঘোষনা করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনিটরিং অফিসার জনাব মো. কামরুজ্জামান।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য ,১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post