নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ায় সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নানা খাতে ভুয়া বিল ভাওচারের মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকা নয়ছয় ও আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় শাস্তি হিসেবে ওই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। যদিও প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত সহ বিভাগীয় মামলার সুপারিক করা হয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অবব্যহার পূর্বক সরকারী ভু-সম্পত্তি বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সম্পত্তিটি ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া কার্যত: অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগও উঠে এসেছে ওই তদন্তে।
এবিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যক্রম অধিশাখা হতে মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত ও গত ১২ মার্চ প্রেরিত ৪১,০১,০০০০,০৪৩.২৮.০০২.১৮,২৮ নং স্মারকের চুড়ান্ত পত্র প্রেরনের মাধ্যমে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ওই পত্রে নানাবিধ আর্থিক অনিয়ম ও সরকারি দায়িত্ব পালনে অবহেলার সুনির্দিষ্ট ১৫ টি খাত উল্লেখ পূর্বক ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সংগঠিত নানা খাতের অনিয়ম স্বেচ্ছারিতার মাধ্যমে অধিদপ্তরের নিজস্ব আর্থিক স য়ে গড়ে তোলা এফডিআরকৃত ১ (এক) কোটি টাকার বিপরীতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিধি বহির্ভূতভাবে শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম ৪২,৫০,০০০/- (বিয়ালিশ লক্ষ প াশ হাজার টাকা) সুদসহ ঋণ গ্রহণ করেন এবং ব্যয় করেন। ডায়ারেটিক ফাউন্ডেশনের ৩টি কক্ষ নির্মাণ খাত হতে ২৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অনিয়ম। উপপরিচালক (ইউসিডি) কর্তৃক উন্নয়ন ব্যয় সাময়িক বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা সত্তে¡ও জহিরুল ইসলাম ৩০ ত্রিশ লক্ষ টাকা ঋণ উত্তোলন করেন।
আইএফআইসি ব্যাংকের ১ কোটি টাকার এফ.ডি.আর ৭২ লক্ষ ৫০হাজার টাকা উত্তোলন করায় হিসাবটির স য় এখন অথি নগণ্য।এছাড়া ৪টি ব্যাংক হিসাবে সর্বশেষ স্থিতির পরিমান ১১লক্ষ ৫২ হাজার,৪শ ৫০ টাকা যা খুবই নগণ্য। এখাতের টাকাও হীন উদ্দেশ্যে তছরূপ করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। এভাবে নানাবিধ উন্নয়ন খাতের প্রকল্প ব্যয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত চাকরীচ্যুত করন নির্দেশনার ওই চুড়ান্ত পত্রে।
কুষ্টিয়া শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো: জহিরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে শহর সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০১৯ অনুসরণ না করে অননুমোদিত কমিটির মাধ্যমে আর্থিক অনিয়ম (ঋণ গ্রহণ, ভবন নির্মাণ) সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা, জমি সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে বিভ্রান্ত করা, বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান অনুসরণ না করার অভিযোগসমূহের কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত সহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ সম্বলিত ১১৯ পাতার ফিরিস্তি প্রেরণ করা হয়েছে সমাজ কল্যান মন্ত্রনায়ের সচিব বরাবর।
এবিষয়ে অভিযুক্ত কুষ্টিয়া শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছে প্রকৃত অর্থে ঘটনাটা এমন নয়। এর মধ্যে অনেক বিষয়ই আছে যার কোন ভিত্তি নেই। চাকরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার সুপারিশ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এছাড়া সরকারী চাকরীর স্বাভাবিক নিয়মেই আমাকে বদলি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: আব্দুল লতিফ সেখ বলেন, ‘শহর সমাজ সেবা অফিসার জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তাধিন অভিযোগ বিষয়ে আমি জানি। তবে সর্বশেষ ওই অভিযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই’। সম্প্রতি কুষ্টিয়া শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে প গড় জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন কর্মকতা হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২০ এপ্রিল ২০২৪

Discussion about this post