Print Date & Time : 14 July 2025 Monday 11:18 am

গাংনীর চিৎলা পাটবীজ খামারে দখলদারি: চলছে অনিয়ম-দুর্নীতির

মাহাবুল ইসলাম, গাংনী: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিৎলা পাটবীজ খামারে চলছে নাজিম বাহিনীর রাজত্ব।
স্থানীয়দের ভাষায়, এটি এখন “নাজিম বাহিনীর” অনিয়ম ও দুর্নীতির অভয়ারণ্য।
অভিযোগ রয়েছে, খামারের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মোর্শেদুল ইসলাম ও মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দেবদাস সাহার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই বাহিনীর অনিয়ম-দুর্নীতির সাম্রাজ্য।

চক্রটির নেতৃত্বে রয়েছেন নাজিম উদ্দীন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন শাহাদত হোসেনসহ আরও কয়েকজন। অভিযোগ অনুসারে, তারা খামারের গেস্ট হাউজ দখল করে এসি রুমে থেকে বিলাসী জীবনযাপন করছেন এবং সরকারি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রান্নাসহ নানা সুবিধা ভোগ করছেন।

জানা গেছে, বর্তমানে খামারে গেস্ট হাউজ, জেডির অফিস, তিনটি গোডাউন ও আনসার ক্যাম্প ছাড়া বাকি সব ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে প্রকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাইরে ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, অথচ নাজিম ও শাহাদাত গেস্ট হাউজে আরাম আয়েশে অবস্থান করছেন।

নাজিম ও শাহাদতের থাকার অনুমতি আনসার ক্যাম্পে থাকলেও, বাস্তবে তারা অবস্থান করছেন গেস্ট হাউজে। এছাড়া শাহাদত হোসেন খামারের ভেতরেই জেডির পৃষ্ঠপোষকতায় হাঁস-মুরগির খামার পরিচালনা করছেন। খামারের উৎপাদিত ধান ও গমই সেখানে হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

খামারে কর্মরত একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শ্রমিকদের ভুয়া তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে “নাজিম বাহিনীর সদস্যরা রাতের আঁধারে খামারের ধান, গম, আলু, সার, কীটনাশক, তেল, এমনকি পুরোনো গাড়ির যন্ত্রাংশ পর্যন্ত চুরি করে বাইরে বিক্রি করছে।”

তারা আরও বলেন, “গ্যারেজে থাকা স্টিলের খুঁটি, এসএস পাইপ, গ্রিল, ট্রাক্টরের যন্ত্রাংশ ও খামারের বড়, বড় গাছ পর্যন্ত চুপিসারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব জানি, কিন্তু মুখ খুলতে পারি না—ভয়ের কারণে।”

শ্রমিকদের অভিযোগ, কেউ প্রতিবাদ করলেই নাজিম উদ্দীন ও জেডির যৌথ চক্রান্তে তাকে খামার থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে গ্যারেজ মেকানিক, ট্রাক্টর চালক, সাধারণ শ্রমিক—সবাই আতঙ্কে কাজ করছেন।

তারা আরও জানান, জেডির রাঁধুনির নামে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি হাজিরা নিচ্ছেন, অথচ কোনো কাজ করছেন না। খাতাপত্রে নাজিম একজন শ্রমিক হলেও বাস্তবে পুরো খামারের নিয়ন্ত্রণই তার হাতে।

অভিযোগ রয়েছে, জেডি এলাকার শ্রমিকদের কাজে না লাগিয়ে বাইরের জেলা থেকে নাজিম ও শাহাদতকে খামারে নিয়ে এসেছেন। শ্রমিকদের ভাষ্য, “জেডির আশ্রয়ে থেকেই তারা এসব অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি খামারের উপপরিচালক কর্মকর্তারাও নাজিমের অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করতে পারেন না।”

পাটবীজ বিভাগের জিএম দেবদাস সাহা এসব বিষয়ে অবগত থাকলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। বরং তিনি মৌখিকভাবে এই চক্রকে অনুমোদন দিয়েছেন বলেই দাবি করেন খামার সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি এই খামারে গড়ে ওঠা দুর্নীতির চক্র, দখলদারিত্ব ও সম্পদ অপচয়ের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে খামারের ট্রাক্টর চালক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কোনো নিয়োগপত্র দেখাতে পারেননি। জানান, তিনি মাস্টাররোলে কর্মরত এবং দৈনিক দিন হাজিরার ভিত্তিতে বেতন পান। তবে খামারে তার বিরুদ্ধে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব তিনি অস্বীকার করেন।

এ বিষয়ে পাটবীজ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) দেবদাস সাহা এবং চিৎলা পাটবীজ খামারের যুগ্ম পরিচালক (জেডি) মোর্শেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।