Print Date & Time : 25 August 2025 Monday 5:46 pm

গাজী সালাউদ্দীনের অপেক্ষায় ফিলিস্তিনীরা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক :
সমুদ্রের অপ্রতিরোধ্য ঢেউ যার বীরত্বে এসে থমকে দাড়াতো । উন্মুক্ত ক্রুসেডে ক্রুসেডারদের আতঙ্ক, রণক্ষেত্রে অদম্য এক সমরনায়ক, তাঁর আগ্নেয়গিরির মত উত্তাপ ছড়ানো তরবারির ঝলকানিতে কেঁপে উঠতো কাফেরদের অন্তরাত্মা। ক্রুসেডারদের কবল থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারকারী সুলতান গাজী সালাহউদ্দীন আল আইয়ুবী ৷

একসময়কার জৌলুস হারিয়ে নাম আর খলিফা পদবী নিয়ে তখনো নির্জীব প্রাণীর মত বিদ্যমান ছিলো আব্বাসীয় খিলাফত। সকল পরাক্রম হারিয়ে, অভ্যন্তরীণ নানান সংঘাত ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত, সিংহাসন নিয়ে চলা গৃহযুদ্ধে বিশৃঙ্খল হয়ে এককালের পরাক্রমশালী সেলজুক সাম্রাজ্য তখন বিভক্ত হয়ে পতনের দ্বারপ্রান্তে। ১০৯৫ সাল ৷ পোপ আরবানের আহ্বানে খ্রিস্টান শক্তি প্রায় ১০ লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল ক্রুসেডার বাহিনী প্রস্তুত করে জেরুজালেম অভিমুখে যাত্রা করে। পথিমধ্যে অনেক যুদ্ধ, জয় পরাজয়ের পর অবশিষ্ট বাহিনী অবশেষে ১০৯৯ সালে নামধারী কিছু মুসলিম শাসকের সহায়তায় ক্রুসেডাররা সমগ্র সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দখল নিয়ে নেয়।

৭ই জুন তারা জেরুজালেমে বাইতুল মোকাদ্দাস অবরোধ করে এবং ১৫ই জুলাই তারা জেরুজালেমে প্রবেশ কর পবিত্র ভূমি আল কুদসে ৪৬২ বছরের মুসলিম শাসনের সমাপ্তি ঘটে।সেদিন(১৫ই জুলাই) ক্রুসেড যোদ্ধারা জেরুজালেমে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়। ৭৫ হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয় যাদের অধিকাংশই ছিলো মুসলিম। যুগের পর যুগ কেটে যায়, কোনো মুসলিম শাসকের জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের সামর্থ্য হয়নি।

১১৮৭ সালের জানুয়ারিতে, জেরুজালেমের ভারপ্রাপ্ত রাজা রেনল্ড পূর্বে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর সাথে হওয়া শান্তিচুক্তি ভঙ্গ করে একটি হজ্জ কাফেলা আক্রমণ করে বসে এবং ব্যাপক লুটতরাজ ও নির্যাতন চালিয়ে কাফেলার সবাইকে বন্দী করে । ১১৮৭ সালে হাত্তিনের যুদ্ধে উভয় বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়। সুলতান সালাহউদ্দীনের মুজাহিদ বাহিনী ক্রুসেডারদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।

২০শে সেপ্টেম্বর মুসলিম বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে এবং শহরের প্রতিরোধ শক্তি ভেঙে দিয়ে ২রা অক্টোবর মুসলিম মুজাহিদ বাহিনী প্রবেশ করে পবিত্র ভূমি আল কুদসে ৯০ বছর পর জেরুজালেম আবার পুনরুদ্ধার করেন মুসলিম সেনাপতি গাজী সালাউদ্দীন আল আইয়ুবী। সালাহউদ্দীন আইয়ুবী যখন ইসলামের তরবারি হাতে আবির্ভূত হন তখন ক্রুসেডের সাজানো কৌশল বারেবারে কেপে উঠে। চক্রান্তের সকল জাল ছিঁড়ে জেরুজালেম ছিনিয়ে এনে শত বছর পর আবার মুসলমানদের হৃদয়ে প্রশান্তি নিয়ে আসেন গাজী সালাউদ্দীন আইয়ুবী।

৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনিরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে৷ রক্তের নহরে ইসরাইলিরা স্নান করতে মজা পায়। তবে ৭ অক্টোবের হামলা এবার হামাস বুঝিয়ে দিয়েছে কতধানে কত চাল।পৃথিবীর ইতিহাস বলে দিনের পরে রাত্রি যেমন আসে, তেমনি রাতের পরে দিনের আলো উদ্ভাসিত হয় ৷ অত্যাচারিরা চিরদিন স্থায়ী হয়না। ফেরাউন যেমন তার রাজত্ব হারানোর ভয়ে অসংখ্য শিশু হত্যা করেছিলো ৷ কিন্তু ফেরাউনের ঘরেই জন্মেছিলো হযরত মুসা (আঃ)। তেমনি ফিলিস্তিনে কোন মায়ের কোলে জন্ম নেবে মহাবীর গাজী সালাহউদ্দিন ৷ যার হাত ধরে নির্যাতিত ফিলিস্তিনীরা পাবে স্বাধীনতা।পাবে মুক্তির মহা পয়গাম।