গুর পূর্ণিমায় উত্তাল পুরির সমুদ্র সৈকত। এক একটা ঢেউ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে তীরে আছড়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ সৈকতে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। সমুদ্র এখন উত্তাল তাই কেউ নামতে পারবে না।
বুঝতে বাকি রইলো না। আমাদের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সঙ্গে পুরির সৈকতের পার্থক্য বিস্তর। আমাদেরটা অনেক সমান্তরাল। আর পুরিরটা অনেক ঢালু ও খাড়া। যার ফলে ঢেউয়ের উচ্চতা বেশী। আঘাত হানার ক্ষমতাও এর বেশি। সৌন্দর্যের বিবেচনায় কক্সবাজারের সৈকতই সেরা।
আমরা আছি পুরির স্বর্গদ্বার বিচে। হোটেলের রুম থেকে সমুদ্রের উত্তাল রূপ দর্শন করছি। রাতে মনে হলো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ধেয়ে আসে সমুদ্র। কাছে গেলে ভয় লেগে যায়।
এক অসাধারণ সময়ে পুরির সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে এসেছি। আষাঢ় মাসের ভরা পূর্ণিমা। জোয়ারে সৈকতের সীমান্ত দেয়াল পর্যন্ত ঢেউ চলে আসছে।
এ মাসের পূর্ণিমা বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে গুরু পূর্ণিমা। বেদান্ত দর্শন পাঠ করে জানলাম গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য। বৈদিক শাস্ত্রে পিতা মাতার পরই শিক্ষাগুরুর স্থান। যিনি শিক্ষা দান করেন তিনি শিক্ষক আর তিনিই গুরু। গুরু সংস্কৃত শব্দ। গু অর্থ অন্ধকার, অজ্ঞতা । রু অর্থ আলো, অন্ধকার দূরিভূত করা। যিনি অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসেন তিনিই গুরু বা শিক্ষক। সেই অর্থে পিতা মাতার পরই শিক্ষকের স্থান। বেদান্তবাদে শিক্ষকের কোনো জাত ধর্ম হয় না। তিনি শুধুই গুরু। শিক্ষককে অপমান করা মহাপাপ। আর জুতোর মালা পরানো, পিটিয়ে মেরে ফেলা সাক্ষাত নরক বাস।
এই গুরু পূর্ণিমার আরও ইতিহাস জানলাম। মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাসের জন্মদিন আজ। এই পূর্ণিমা তিথিতে মুণি পরাশর ও মাতা সত্যাবতির ঘরে জন্ম নেন বেদব্যাস। তিনি ছিলেন মহাপণ্ডিত। চারটি বেদের ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন বলে তিনি বেদব্যাস। মহাভারত ও শ্রীমদ্ভগবত রচয়িতা বেদব্যাস। মহর্ষি বেদব্যাস ১৮ টি পূরাণ রচনা করেন। বেদান্তবাদে মহর্ষী বেদব্যাসকে সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু মানা হয়। গুরু পূর্ণিমায় প্রণাম জানাই মহর্ষী বেদব্যাসকে।
এই পূর্ণিমার আরও মাহাত্ম্য হলো ভগবান বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভের পর গুরু পূর্ণিমাতেই প্রথম মহা উপদেশ দান করেছিলেন।
ফলে আজকের পূর্ণিমা সত্যি অসাধারণ। নিজেও সৌভাগ্যবান শ্রী শ্রী জগন্নাথের পবিত্রস্থান পুরির সমুদ্র সৈকতে অবস্থান করছি। সেখান থেকে আমার সকল শিক্ষাগুরুর প্রতি জানাই প্রণাম। সকল শিক্ষককে জানাই প্রণাম। তাদের পদধূলিই আমার জীবনের পাথেয়।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য //জুলাই ১২,২০২২//

Discussion about this post