Print Date & Time : 23 August 2025 Saturday 3:02 am

গোয়াইনঘাটের অঘোষিত সম্রাট অধ্যক্ষ ফজলুল:দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড়

সিলেট অফিস : সিলেটের গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ছিলেন সাবেক এমপি ইমরানের ডানহাত, কেউ বলেন, প্রিন্সিপাল, কেউ বলেন রাজা, কারও চোখে তিনি অঘোষিত সম্রাট।  

এমপি ইমরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার সুবাধে স্হানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথেও রাখতেন গভীর সুসম্পর্ক। এর সুবাদেই তিনি কলেজে প্রভাব বিস্তার করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চান না। কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট শহরে বানিয়েছেন একাধিক বাড়ী। কিনেছেন নামে বে-নামে প্লট /ফ্লাট। কিনেছেন দামী গাড়ীও। এছাড়াও রয়েছে একাধিক হোটেল রিসোর্ট।

২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের রজত জয়ন্তী ও পূণর্মিলনী উদযাপনের নামে প্রায় ১৫শত সাবেক ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন ফি নামে জনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে প্রায় দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেন ফজলুল হক। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কালেকশন করেছেন প্রায় ৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে সাড়ে চার কোটি টাকা কালেকশন হয়েছিল। অনুষ্ঠানে আনুমানিক ব্যায় হয়েছে ৫০- ৬০ লক্ষ টাকা। আর বাকি টাকা কোথায় ব্যয় করেনছেন সেটিরও কোন হদিস নেই। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, সাবেক এমপি ইমরানের ছত্রছায়ায় ফজলুল হক বেপরোয়া। মানসম্মান রক্ষায় কেউ কথা বলিনি। এমপি ইমরানের ডান হাত পরিচয়ে জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ত্রাসের রাজত্ব করেছে সে। বিশেষ করে এই তিন উপজেলায় উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে নৌকার মার্কা পাইয়ে দেয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ও রয়েছে ফজলুল হকের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় তিন উপজেলায় অপরাধ জগতের মাফিয়াদের শেল্টার দাতা হলো ফজলুল হক। 

গোয়াইনঘাট আওমীলীগের অনেকে জানিয়েছেন, ফজলুলই ছিল গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর ও কোম্পানিগঞ্জ এই তিন উপজেলার অঘোষিত রাজা। তার ইশারায় চলতো সব কিছু। 

কলেজের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য সরকারি বরাদ্দ আনলেও ঐ কাজের টাকা কলেজ তহবিল থেকে নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে। কলেজের শহিদ মিনার তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মিত দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকা। তার পাহাড় সমান অপকর্ম নিয়ে কলেজের কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী কেউই কথা বলার সাহস পেত না। কথা বললেই হামলা মামলার হুমকি দিত সে। শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে দেশ ছেড়েছেন ফজলুল। গা-ঢাকা দিয়েছেন তার সহযোগীরাও।

জানা যায়, অধ্যক্ষ ফজলুল হক ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন তিনি। কয়েক মেয়াদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ সালের ১৪ জুন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত একটানা এই দায়িত্বে আছেন তিনি। কলেজ সরকারি করণের দোহাই দিয়ে একদিকে শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা যেমন চাঁদা নিয়েছেন অন্যদিকে কলেজ ফান্ড থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠছে। 

গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের কয়েক শিক্ষার্থী জানান, কলেজ নামে মাত্র সরকারি, কিন্তু কাজে নাই। ভর্তি ফি মাসিক বেতন সহ বিভিন্ন ফি অতিরিক্ত আদায় করা হয়। আমরা কোন ছাড় পাইনা। এমপি ইমরানের নাম ভাঙিয়ে তিনি এলাকায় নিজের এমন অবস্থান তৈরি করেন। ফলে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না। একজন সাধারণ অধ্যক্ষ থেকে ফজলুল ধাপে ধাপে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছেন। হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, কোন গরিব ছাত্রী/ছাত্রী হাফ বেতনের জন্য আবেদন করলে আবেদন মঞ্জুর না করে একটি কমন ডায়লগ দিতেন-কলেজ থেকে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না, আমার পকেট থেকে দুই মাসের বেতন দিয়ে দিচ্ছি। এছাড়া কোভিডের কারণে ২০২০ সালের এইচ এস সি পরীক্ষা না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম ফিলাপের অর্থ শিক্ষা বোর্ড ফেরত প্রদান করিলে ছাত্রছাত্রীদের বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন এই অধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ উনি কলেজের টাকা ডাকাতি করে দুই মাসের বেতন দিয়ে বুঝান উনি অনেক বড় দানবির। কিন্তু উনি আসলে একটি মুখোশধারী মাফিয়া। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজে পাঁচ হাজার টাকার উপরে যেকোন কাজ করাতে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতিক্রমে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে তার মাধ্যমে করাতে হয় কিন্তু তিনি তা করেন নি। বরং বিনা টেন্ডারে কোটি কোটি টাকার কাজ করিয়েছেন এক জন শিক্ষক ও একজন নিজের মনোনিত মিস্ত্রির মাধ্যমে। 

অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হকের সকল অপকর্ম রুখতে তার পদত্যাগ দাবী করছেন গোয়াইনঘাট কলেজের শিক্ষার্থীসহ

গোয়াইনঘাটের সচেতন নাগরিক বৃন্দ। শুধু তাই নয় তাকে আটক করে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবীও জানান তারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফজলুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন সে বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৮ আগষ্ট ২০২৪