শেখ জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট:
বাড়ি ভিটার ওপর অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণে করতে দেয়নি এক বিধবা নারী পরিবার। এতে গ্রাম্য মাতাব্বর সোলায়মান আলী (৫৫) ফতোয়া দিয়ে ৯ মাস ধরে ওই বিধবার পরিবারকে এক ঘরে করে রেখেছে।পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সমাজের মসজিদে নামাজ আদায়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। এমন কি বিধবার দোকানে সমাজের কেউ পণ্য ক্রয় করতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে।
ওই মাতব্বরের ভয়ে সমাজের কেউ পরিবারটির সাথে কোন ধরণের সহায়তা করছে না। পরিবারটির জীবন ও জীবিকা অতিষ্ট করে তুলেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব দৈলজোর মাস্টারপাড়া গ্রামে।
ফতোয়া দেয়া গ্রাম্য মাতব্বর সোলায়মান আলী পূর্ব দৈলজোর গ্রামের মাস্টারপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি ও গ্রাম্য প্রভাশালী ব্যক্তি।
ভুক্তভোগী বিধবার লিপি বেগমের পরিবার প্রতিকার চেয়ে সমাজের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
জানা গেছে, সরকারি কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দেয় মাতাব্বর সোলায়মান। পরে পানি নিষ্কাশনের করতে জোরপূর্বক অসহায় বিধবার বসতবাড়ির ভিটার উপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা করে। এতে বাধা দেন বিধবা লিপি বেগমের পরিবার। ড্রেন নির্মাণ করতে না পারায় মাতব্বর সোলায়মানের নির্দেশে লিপি বেগমের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। পরে গত বছরের ১৯ জুলাই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোতে পত্র দেয়। দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হয়েছে । ফতোয়াবাজির শিকার ভুক্তভোগী পরিবার কোন প্রতিকার পায়নি। বরং পরিবারের লোকজনকে নামাজ পড়তে স্থানীয় মসজিদে ডুকতে দেয়া হয় না। কথা বলতে পারছেন না আশপাশের প্রতিবেশীর কারও সঙ্গে। মাতব্বরের ভয়ে বিধবার মুদি দোকানে হতে কেউ সদাইপাতি ক্রয় করছে না। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় পরিবারটি পড়েছে দারুণ বেকায়দায়।
কয়েক দিন আগে প্রতিবেশীর বিয়ের দাওয়াত দেয় বিধবা লিপি বেগমের পরিবারকে। এই দাওয়াতের কারণে মাতব্বর ও তার লোকজনের চাপে সমাজের ২৫ ঘরের কেউ দাওয়াত খেতে যায়নি। ফলে একঘরে করার বিষয়টি আরও প্রকাশ্যে আসে।
পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার প্রতিবাদ করলে মাতব্বরের লোকজন ভাঙচুর করে তাদের বাড়িঘর।
ফতোয়ার শিকার লিপি বেগমের অভিযোগ, থানায় অভিযোগ করেছি কোন ব্যবস্থা বা আইনগত সহায়তা পাইনি। পরে পুলিশ সুপারকে জানানো হয়। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাতাব্বরের লোকজন পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। উল্টো ওই মাতব্বর বাদী হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজনের নামে থানায় মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পত্র পেয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপার সহ সকল দপ্তরে পত্র দিয়ে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি পুনরায় তিনি দেখবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গ্রাম্য মাতব্বর সোলায়মান জানান, সব জায়গায় তার লোক আছে। কোনো মামলায় ভয় পান না তিনি। ফতোয়া দিয়েছি তো কী হয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//