কল্পনা করুন ছবিটা। পাঁচ হাজার দর্শক স্টেডিয়ামে দেখছে ফুটবল ম্যাচ। আক্রমণে উঠেছেন এক দলের কয়েকজন ফুটবলার। কিন্তু আক্রমণ নষ্ট হলো গোলপোস্ট নয়, হাই ভোল্টেজের বিদ্যুতের খুঁটিতে!
অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এই ব্যাপারটা ঘটতে পারত টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর ইউনিয়নের কুশরারিয়া মৌজার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে নির্মাণকাজ শুরু হয় এই স্টেডিয়ামের। ক্রীড়া পরিষদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আফতাব এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ ছিল ৪১ লাখ টাকা। মাঠের মাঝ বরাবর ছিল বিদ্যুৎ পরিচালনার জন্য তিনটি খুঁটি। সেগুলো অন্য জায়গায় না সরিয়ে কাজ শেষ করে আফতাব এন্টারপ্রাইজ।
কিন্তু মাঠের ভেতর বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় উপজেলা প্রশাসন স্টেডিয়ামটি বুঝে নিচ্ছিল না কোনোভাবে। আবার খুঁটি সরানোর বরাদ্দ না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও অনড়।
এই টানাপড়েনে কেটে যায় অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের নভেম্বরে সমাধান হয় সমস্যার। স্থানীয় প্রশাসন ও বিদ্যুৎ লাইনের উন্নয়নকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে স্টেডিয়ামের বিদ্যুতের খুঁটি তিনটি অপসারণ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি থাকার পরও স্টেডিয়াম তৈরির কাজ নিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নে আফতাব এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার রেজাউর রহমান জানালেন, ‘ভীষণ বিপদে পড়েছিলাম আমরা। নির্মাণ শেষে স্টেডিয়াম বুঝে নিচ্ছিল না কেউ। অথচ খুঁটিগুলো সরানোর জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দও ছিল না।
বরাদ্দ ৪১ লাখ টাকারও সঠিক ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ ঘাটাইল উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শাহিনের, ‘এই স্টেডিয়ামে পাঁচ হাজার মানুষ একসঙ্গে বসে খেলা দেখার কথা। কিন্তু বসার জন্য তৈরি করা পাকা বে গুলো মাটির সঙ্গে লেগে গেছে। বসার উপায় নেই। বলা হচ্ছে এটা ৪১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম। আমার ধারণা ১০ লাখ টাকাও খরচ হয়নি। তা ছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি থাকে যেখানে, সেই জায়গায় স্টেডিয়াম তৈরির মানে কী?’
স্টেডিয়ামের খুঁটিগুলো সরানো হলেও কাজের কাজটা হয়নি। মাঠ তৈরি হয়েছে কোনো রকমে পাহাড়ি মাটি কেটে। পুরো মাঠ তাই অসমতল। বৃষ্টিতে থাকে কাদা আর অন্য সময়ে গর্ত। উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে এমন স্টেডিয়ামের মাঠে খেলতে যাবে কে? এ জন্য কাজ সম্পন্ন হলেও স্টেডিয়ামের উদ্বোধনই হয়নি! কোনো খেলাও হয়নি। ঘাটাইল উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শাহিনের ক্ষোভ, ‘স্টেডিয়াম নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার চার বছর পরও খেলা মাঠে গড়ায়নি—এমন কিছু গোটা পৃথিবীর কোথাও হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আসলে স্থান নির্বাচনই ঠিক হয়নি। উপজেলা সদর থেকে এত দূরে পাহাড়ি এলাকায় এটা না করলেও চলত। এই স্টেডিয়ামে আদৌ কোনো খেলা হবে না। কোনো পাহারাদার না থাকায় স্টেডিয়ামের সব মালপত্র চুরি হয়ে গেছে এরই মধ্যে।’
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুুনিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি ঘাটাইলে আসার অনেক আগে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। এর ভেতর বিদ্যুতের খুঁটি ছিল, এটা অবাক করা ব্যাপার। খুঁটিগুলো সরানো হলেও স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়নি এখনো।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post