চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে চেয়ারম্যানের নিজেস্ব আরাম আয়েশের বন্দোবস্ত করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এতে সন্ধান মিলে পরিষদ চেয়ারম্যানের রুমে এসি বসানোর নামে সরকারি অর্থ লুটপাটসহ নানা অনিয়মের।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার ১নং (খ) চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের এক শতাংশ স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের বরাদ্দকৃত অর্থে প্রকল্প তালিকার ৩২ নম্বর ক্রমিকে ছিল ‘ইউনিয়ন পরিষদ সংস্কার ও এসি ক্রয়ে ব্যয়’ ধরা হয়েছে দুই লক্ষ টাকা।
এখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি কয়টি এসি ক্রয় ও কি সংস্কার হয়েছে সমপরিমাণ অর্থে। কেননা খিচুড়ি রান্না, ঘাস চাষ ও পুকুর খননের মতো কৌশল দেখতে বিদেশ সফরে যাওয়ার মতো হাস্যকর প্রকল্প জমা দিয়ে যেখানে নয়-ছয় করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে একই সুরে মহোৎসবে তাল মিলিয়েছে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নও। তাঁদের কাছে প্রকল্প মানে টাকার মেশিন। প্রকল্প হলেই টাকা উড়ে। সেই টাকা যায় নামধারী জনসেবকের পকেটে।
আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলে, ২০১৮ সালে প্রথম এসি কেনার ১ বছর ৪ মাস ২৪ দিন পর অর্থ্যাৎ ২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি একই উৎসের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে ৪০ নম্বর প্রকল্পে আবারো চেয়ারম্যানের রুমে এসি স্থাপন, সচিবের রুমে টাইস ও গ্লাস স্থাপনের নামে পুনরায় দুই লক্ষ টাকা কর্তন দেখিয়ে কেটে নেওয়া হয়।
যদিও সরেজমিনে পরিষদে গেলে তথ্য মিলে, চেয়ারম্যানের রুমে দেড় টন ওজনের দুটি ওয়ালটন এসি বসানো হয়েছে। যার মুল্য হতে পারে এক লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা মতো। কিন্তু দুই প্রকল্পে মোট বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ৪ লক্ষ টাকার। তাহলে বাকি টাকা গেলো কোথায়? তাহলে এটাই স্পষ্ট চেয়ারম্যান নিজের আরাম আয়েশের জন্য এসি বসালেন সরকারি টাকায়। একজন কোটিপতি চেয়ারম্যানের একি বিলাসিতা!
শুধু কি তাই; পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে টাইস বসানো ও সিলিং করার নামে আরো দুই লক্ষ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। এছাড়াও নিজের বাথরুমে টাইস বসানোর নামে আরও ৪৯ হাজার টাকা সরকারি অর্থ খরচ করেছেন তিনি। অথচ ইউনিয়নের কোন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে জনগণের জন্য এসব অর্থ ব্যয় করা হয়নি। শুধুমাত্র ছাবের চেয়ারম্যান তাঁর নিজ ব্যবহার ও বিলাসিতার জন্য এসব অর্থ খরচ করেছেন নিজের খেয়াল খুশি মতো। সম্প্রতি এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে জনমনে।
তথ্য মিলে, ২০১৮ সালের শুরুতেই চরপাথরঘাটা ১নং ও ২নং ওয়ার্ড সংলগ্ন ছাবের আহমদ সড়কে মাটি ভরাটের নামে ৩৫টি উপকারভোগী কার্ডের বিপরীতে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। এখানেই থেমে ছিলো না তাঁর অনিয়ম। পরের বৎসর ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ে আবারও একটি অভিনব প্রকল্প দেখান তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের নামে সড়ক তৈরি করলেন সরকারি টাকায়।
এই প্রকল্পের নামকরণ করেন ‘চরপাথরঘাটা ছাবের চেয়ারম্যান সড়ক’ এ মাটি ভরাট ও সংস্কার করতে ২৯টি উপকারভোগী কার্ডের বিপরীতে ব্যয় করেছেন ২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। জানা যায়, চেয়ারম্যান শুধু নিজে বাসায় যেতে এ সড়ক তৈরি করেন সম্পূর্ণ সরকারি টাকায়। এরপর একই বছরের ৬ই অক্টোবর উক্ত সড়কের সংযোগস্থলে ড্রেন নির্মাণের নামে পরিষদ থেকে আরও ২ লক্ষ টাকার বরাদ্দ নেন তিনি।
জনগণ কিছুটা বুঝে ও জানে। সরকারী প্রকল্পের টাকা নিয়ে প্রচুর নয়-ছয় হয়, এটা নতুন কোন ঘটনা না। একটা কাজে সত্যিকারের ব্যয় যা হয়, তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাজেট দেখিয়ে কিছু কিছু চেয়ারম্যান নিজেদের পকেট ভারী করেন। কখনও অপ্রয়োজনীয় কারণে অযথাই পথন্দসই প্রকল্প দিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। আর জনগণকে খুব একটা বিচলিত করে না!
কিন্ত এই লোকগুলোর কাছে পুরো ইউনিয়নের মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে, চুরির স্ক্রিপ্টটা যাতে বাস্তবসম্মত হয়। তামিল-তেলুগু সিনেমার মতো অবাস্তব চিত্রনাট্য সাজিয়ে চুরি করতে গেলে তা চোখে পড়বেই, সেটা নিয়ে সমালোচনাও হবে। সেটা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বালিশ কিংবা কেটলি কেনার ঘটনাই হোক। এমন আকাশ-পাতাল অসঙ্গতি দেখলে লোকে তো আঙুল তুলবেই।
এসব উপস্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ বলেন, ‘আমি এখন ইছানগরে মিছিল নিয়ে আছি। আমি অনিয়ম কিছু করিনি। যা করেছি এলাকার মানুষের জন্য। পরিষদে যা দরকার। তাই করেছি। দুর্নীতি হওয়ার মতো কিছু করলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হতো। ১১ বছরে তেমন কিছু হয়নি। ভাই এখন ব্যস্ত। পরে কথা বলব বলে ফোন লাইন কেটে দেন তিনি।’
চট্টগ্রাম জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি টাকা যেখানে সেখানে ব্যয় করার নিয়ম নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি স্তরের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে, কোন খাতের বরাদ্দ কোন প্রকল্পে ব্যয় করা যাবে। সরকারি অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবহার না করলে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আসতেই পারে। যা অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হবে।’
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১০ জুন-২০২২//
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post