মীর আনোয়ার হোসেন টুটুল, মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা:
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এই ঘটনায় নগদ টাকাসহ যাত্রীদের ৭ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে। সংঘবদ্ধ ডাকাত দল ডাকাতি ও লুটপাটের পর বাসের দুই নারীকে যাত্রীকে ধর্ষন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার তিন দিন মামলা দায়ের হয়েছে। বাসের যাত্রীরা এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ননা দিয়েছেন এবং ঘটনার পর ওমর আলী, মজনু মিয়া ও সোহাগ হাসান নামে তিন যাত্রী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. খায়রুল বাশার। বাসে ডাকাতি ও নারী ধর্ষনের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ডাকাতির ঘটনায় জাতয়ি জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করে ডাকাত সন্দেহে বাসের চালক বাবুল, সুপারভাইজার সুমন ও সহকারী সুপারভাইজার আলমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন যাত্রীরা। নাটোর জেরা পুলিশ তাদের আদালতে প্রেরন করলেও এক দিনের মাথায় সেখান থেকে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
বিষয়টি এখন টক অব দা কান্টিতে পরিনত হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্ত মুলক মাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মামলার বাদী ওমর আলী, মজনু মিয়া ও সোহাগ হাসান জানান তাদের বাড়ি নাটোর ও রাজশাহী জেলায়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার গাবতলী থেকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে উঠে (বাস নং ময়মনসিংহ ব-১১-০০৬১)। রাত ১১ টার দিকে নাটোর ও রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। বাসে ৪০-৪৫ জন যাত্রী ছিল। বাসটি হেমায়েতপুর বাস স্টেশনে এল ৬-৭ জন যাত্রী উঠে। আবার বাসটি রাত দেড়টার দিকে চন্দ্রা এলাকায় এলে যাত্রা বিরতীর সময় আরও আরও ৮-৯ জন যাত্রী উঠে। বাসটি রাত দুইটার দিকে ছাড়ার পর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার খাড়াজোড়া হাইটেক পার্কের কাছে আন্ডার পাসের উপর এলে ডাকাত দলের সদস্যরা ধারালো অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে লুটপাট চালায়। কয়েকজন ডাকাত চালকের আসনের কাছে গিয়ে বসে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। এভাবে কয়েক ঘন্টা চলে যাত্রীদের মারপিট, দস্তাদস্তি। লুটে নেয় নগদ টাকাসহ প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার মালামাল।
বাসে লিপি বর্মন, শ্রী সাদার দাস, মন্ত বর্মনসহ বাসে কয়েকজন নারী যাত্রী ছিল।
এদের মধ্যে একজন সনাতন ধর্মের (হিন্দু) নারী যাত্রীকে বাসের পিছনে নিয়ে ধর্ষনের মত জগন্য কাজ চালায়। ওই নারী চিৎকার করলেও কোন লাভ হয়নি। এরপর অপর একজন নারী যাত্রীকে বাসের পিছনের সিটের আগের সিটে নিয়ে একই কাজ চালায় ডাকাত দলের সদস্যরা। বাসটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেলদোয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া নাসির গ্লাসের সামনের ইউটার্ন করে আবার গাজীপুরের উদ্দেশ্যে গিয়ে কালিয়াকৈর, চন্দ্রা ও কোনাবাড়ি দিয়ে ঘুরে আবার নাটোর ও রাজশাহীর দিকে রওয়ানা দেয়। ভোর রাতে ডাকাত দলের সদস্যরা মহাসড়কের কোন এক জায়গায় নেমে যায়। নাটোরে গিয়ে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামকে জানানো হয়। তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বিষয়টি টাঙ্গাইল, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর থানাকে অবহিত করতে বলেন। তখন বাসের চালক বাবুল, সুপারভাইজার সুমন ও সহকারী সুপারভাইজার আলমকে সন্দেহ হলে ৯৯৯ কল করলে পুলিশ আসে। তখন তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। নাটোর থানা পুলিশ তাদের আদালতে প্রেরন করলেও এক দিনের মাথায় সেখান থেকে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোর ছয়টার দিকে মির্জাপুর থানায় এসে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানানো হয়।
অপর দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাসে ডাকাতি ও নারী ধর্ষনের মত ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি টনক পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর।
পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনার তিন পর আজ শুক্রবার মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা নং-১৭, তারিখ ২১/০২/২০২৫ ইং। ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-সোধিত-২০২০) এর ১০, তৎসহ ৩৯৭ / ৩৯৭, পেনাল কোড ১৮৬০। মামলার বাদী হয়েছে ওমর আলী, মজনু ও সোহান এই তিন যাত্রী।
এদিকে ঘটনার পর আজ শুক্রবার টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মির্জাপুর সার্কেল এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান চৌধুরীসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিয়টের কর্মকর্তাগন মির্জাপুর থানা ও ঢাকা-টাঙ্গাইর মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন পয়েন্ট পরিদর্শন করেছেন।
পরিদর্শনের পর পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভুক্তভোগি পরিবার যেন ন্যায় বিচার পান সে জন্য যে কোন উপায়ে অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি, নগদ টাকাসহ মালামাল লুটপাট এবং নারী নির্যাতনের ঘটনায় আজ শুক্রবার তিন যাত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর, নাটোর, রাজশাহী এবং ঢাকা জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।