কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার আদালত আলোচিত চাল রশিদ’কে জামিন দিলেও কারামুক্ত হতে পারছেনা তিনি। আগামী ২৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে তাকে জামিনাবেদন করতে হবে; বিজ্ঞ আদালত শুনানী শেষে জামিন মঞ্জুর করলেই কেবল তিনি রাজশাহী জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারবেন বলে কুষ্টিয়া জেলা কারাগার সূত্রে জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলির মধ্যে তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় শনিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাস্কিং রাইস মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি রশিদ এগ্রো: লি: গ্রুপ কোম্পানীজের স্বত্ত্বাধিকার আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করে। ওই দিনই আদালত তাকে কারাগারে প্রেরনের আদেশ দেন।
রবিবার বিকেলে রবিবার বিকেল নাগাদ কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টের বিচারক মো: আব্দুল কুদ্দুস এর আদালত তিনটি মামলাতেই জামিনাদেশ দেন মর্মে জেল গেইটে বেল বন্ড আসে। কিন্তু এই বেল বন্ড কুষ্টিয়া কারা কর্তৃপক্ষের হাতে পৌছানোর পূর্বেই রাজশাহী জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারের কার্যলয় হতে উল্লেখিত আসামী তলবের নোটিশ কুষ্টিয়া জেলা কারাকর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌছায়।
নোটিশে বলা হয়েছে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দি কুষ্টিয়া কোর্টপাড়াস্থ র্যাব গলির বাসিন্দা হাজি ইসাহক আলী বিশ^াসের ছেলে রশিদ ওয়েল মিলস লি: এর মালিক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর আসামী আব্দুর রশিদকে যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে আগামী ২৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহীর সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে’। ফলে এমুহুর্তে কুষ্টিয়ার আদালত তার জামিনাবেদন মঞ্জুর করলেও রাজশাহীর আদালতের আদেশের বাইরে যাওয়ার কোন আইনগত সুযোগ নেই’।
উল্লেখ্য, দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রনকারী সিন্ডিকেট হোতা রশিদ এগ্রো: লি:সহ কয়েকটি গ্রুপ কোম্পানীর স্বত্ত্বাধিকার এবং বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাস্কিং মিল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে কয়েকজন পাওয়ানাদার ও কয়েকটি ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায়ে রশিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে দায়ের হওয়া প্রায় শতাধিক মামলার মধ্যে তিনটি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পাওয়ার পর গত শনিবার সন্ধায় কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার পর আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুুলিশ সূত্রে জানায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে রাজশাহী অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামের আদালত ১ কোটি ৬৪লাখ টাকার একটি চেক ডিসঅনার মামলা নং সি আর- ৬৪৩/২৩ দ:বি: ৪০৬/৪২০ ধারার মামলায় আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেন।
আদালতের আদেশ কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের হাতে পৌছানোর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মাহমুদা সুলতানার আদালতে করা দুইটি সি আর মামলা নং ১৯৬০/২৪ ও ৪৮৭/২৪ দ:বি: ৪০৬/৪২০ ধারায় কুষ্টিয়ার খাজানগরের রশিদ এগ্রো: লি: এর স্বত্ত্বাধিকার আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে করা মামলাতেও সংশ্লিষ্ট আদালত হতে গত সেপ্টেম্বরে ইস্যুকৃত গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
সব মিলিয়ে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীর অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল আদালত হতে ইস্যুকৃত ৩টি গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করেন বলে নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক শিহাবুর রহমান।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মতিয়ার রহমান জানান, ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্ট ও অর্থঋণ আদালতে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক সহ কয়েকটি ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায়ে সব মিলিয়ে শতাধিক মামলা রয়েছে আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের দায়ের করা প্রায় অর্ধ শতাধিক মামলা রয়েছে যেগুলি দায়-দেনার পরিমান ৫শ কোটির উপরে। অগ্রনী ব্যাংকের মামলা সংখ্যা ১১টি যার দায়-দেনার পরিমান প্রায় ২শ কোটির উপরে এবং ট্রাষ্ট ব্যাংকের করা মামলা নিষ্পত্তির মধ্যদিয়ে ২শ ১০ কোটি টাকা আদালয়ে রশিদ গ্রুপের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নিলামের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে’।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে আব্দুর রশিদের ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন মুরাদের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এখানে যেটা হয়েছে তার সবই ব্যবসা কেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। এরজন্য যে আইনী জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা আইনগত ভাবেই আমরা মোকাবিলা করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই একটা সমাধানের পথ পেয়ে যাবো’।

Discussion about this post