ইরফান উল্লাহ, ইবি: ২০২০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ, শেখ মুজিব এবং আ’লীগ নেতাকে নিয়ে মন্তব্য করায় ৩ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিলেন সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী।
সাময়িক বহিষ্কৃত তিন শিক্ষার্থী হলেন, বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজিদা সুলতানা ছন্দ ও একই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাদিকুল ইসলাম এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আশিকুল ইসলাম পাটোয়ারী”। তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কারের পূর্বে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর ই-মেইলে পত্র প্রেরণের জন্য বলা হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ৭ এপ্রিল ২০২০ সালে সেনা অভ্যুত্থানে নিহত শেখ মুজিব হত্যার আসামি হিসেবে মাজেদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী সাজ্জাদ হোসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উক্তি টেনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ঐ পোস্টে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিদা সুলতানা ছন্দ শেখ মুজিব হত্যার বিচারকে ‘পুরাতন কাসুন্দি ঘাটা’ বলে করে মন্তব্য করেন। তার এমন মন্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা ঐ ছাত্রীর শাস্তি ও বহিষ্কারের দাবি জানান। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে ৮ এপ্রিল রাতেই তানজিদা সুলতানাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
ঐ ঘটনার পরেরদিনই শেখ মুজিবকে কটুক্তির দায়ে “আশিকুল ইসলাম পাটোয়ারী” নামে আরেক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। ফেসবুকে নিজ টাইমলাইনে ‘শেখ মুজিবকে ফেরেশতারূপে হাজিরকরণ’ ও শেখ মুজিব হত্যার বিচারকে ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করে প্রশাসন। ওই শিক্ষার্থী ছাত্র মৈত্রী ইবি শাখার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন। উপরোক্ত ঘটনায় তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ১৫ জুন প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মাদ নাসিমকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে কটূক্তি করার অভিযোগে ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের (ইবি) সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন । এসময় সাদিকুলের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার দাবি জানায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সংসদের নেতা-কর্মীরা।
একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটিও করা হয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হিসেবে ছিলেন আইন বিভাগের প্রফেসর ড. রেহানা পারভীন এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি ড. সাজ্জাদ হোসেন। পরে ঐ শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটির কাছে যৌক্তিক কারণ তুলে ধরেন। কমিটি তাদের কথা শ্রবণ শেষে কারণগুলো লিখিতভাবে দিতে বললে তারা তা জমা দেন। তবে ততকালীন প্রশাসন পরিবর্তন হওয়ায় তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পরবর্তী প্রশাসনের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, তিন শিক্ষার্থীই বিগত ভিসির সময়ে সাময়িক বহিষ্কৃত হয়েছিল। নতুন ভিসি আসার পর তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
সেসময় এ বিষয়ে ততকালীন ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী গণমাধ্যমকে বলেন, সবাই যখন জাতির পিতার খুনিদের বিচার দাবি করছে সে সময় ঐ ছাত্রীর এমন মন্তব্য জাতির পিতার প্রতি অসম্মান। একইসঙ্গে এ মন্তব্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ঐ ছাত্রী অভিযোগ স্বীকার করেছে। প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, এ মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাত কার্য দিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। ঘটনার কারণ যাচাইয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট পেশ করলে আমরা চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আশাকরি সরকারও এ বিষয়ে কঠোর হবেন।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী এবং তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আমি কী লিখেছি সেটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রয়োগ করতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত বহিষ্কারাদেশ। তদন্ত কমিটি ও প্রমাণ করতে পারেনি আমি ছাত্র-শৃঙ্খলার কোন ধারাটি ভঙ্গ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ এবং আন্দোলন যাতে না করি সেজন্য তারা আমাকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিল। ততকালীন ভিসি আসকারী নিজেই এক সামাজিক মাধ্যমে বলেছে যে, তাকে উপরমহল থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বহিষ্কার আদেশের জন্য।
এছাড়াও তিনি বলেন, আমার উপর নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ দিয়েও চাপ প্রয়োগ করা হতো। তৎকালীন ছাত্রলীগের ইবি শাখার সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সর্বশেষ সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় আমার উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করেছিল। আমার বিরুদ্ধে ভুয়া নিউজ করে শিবির ট্যাগ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা এগুলো প্রমাণ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে বর্তমান ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “এ বিষয়ে তৎকালীন তথ্য ঘেঁটে দেখা প্রয়োজন , কারা আসলে প্রকৃত দোষী ছিল বা এহেন কার্যে বহিষ্কারের কোনো আইন আদৌও আছে কিনা! বিশেষ করে ছাত্র-জনতার ৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের প্রতি যাবতীয় অন্যায়ের বিচার করা প্রশাসনের দায়িত্ব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রশাসক অধ্যাপক ড. নূরুন নাহার বলেন, এটা অনেক আগের ঘটনা। আমার এ সম্পর্কে ধারণা নেই। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট গুলো দেখতে হবে।
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post