শ্রীমঙ্গলের রার্নার স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে “আই লাভ ইউ” বলার অপরাধে প্রতিবাদের নামে বহিরাগত লোক ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিন্তু ঘটনার একমাস পেরিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা
অফিসারসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্যও করা হয়নি আজ পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন।
মানুষের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ। শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে “আই লাভ ইউ” বলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদের নামে শিক্ষকদের তালা বদ্ধ করে রাখা। স্কুল ছাত্রীদের ক্লাস থেকে জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে বের করা। স্কুলের
বিল বোর্ড ভাংচুরসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। কেউ বলছেন এটা সুপরিকল্পিত সাজানো ঘটনা। কেউ বলছেন স্কুলটি ধংসের জন্য এক শ্রেণীর লোক কাজ করছে! কেউ বলছেন
আবার প্রতিহিংস্রার কারণে এই ঘটনার সূত্রপাত্র। যদি এমন হয় আসল ঘটনা কি? এমন রহস্যের উদ্ঘাটন চায় ছাত্র/ছাত্রীর অভিবাহকসহ সাধারণ মানুষ। এই ঘটনার
সাথে জড়িত থাকা অতিউৎসাহী একজন ওয়ার্ড সদস্যের নাম উঠেছে। তিনি প্রথমে
মৌখিক অভিযোগ করেন মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষককে তারপর কোন রকম তদন্তের
সুযোগ না দিয়েই উস্কানি দেন এই বর্হিরাগত লোকদের।
শ্রীমঙ্গল থানায় অভিযোগ সূত্র মতে জানাযায়, ৭ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ঐ স্কুলের এক খন্ড কালিন শিক্ষক ২৭ আগষ্ট ছাত্রীটির এক বান্ধবী সহ তার রুমে ডেকে নিয়ে যান। পরে ছাত্রীটিকে রেখে ওর বান্ধবীকে পানি আনতে পাঠায়।
ছাত্রীকে শিক্ষকের রুমে নিয়ে “আই লাভ বলার” জন্য বলেন। ছাত্রটি “আই লাভ ইউ” না বলায় তাকে অশ্লীল কাথাবার্তা বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। পরে ছাত্রী
বিষয়টি তার ক্লাস ক্যাপটেন ও তার বান্ধবীকে জানিয়ে বলে অভিযোগ সুত্রেজানা যায়, পরবর্তীতে ১লা সেপ্টেম্বর ছাত্রী তার পরিবারকে বিষয়টি অবগত
করে। বিষয়টি নিয়ে তার পরিবার ও বর্হিরাগত কিছু লোক নিয়ে ৩রা সেপ্টেম্বর
স্কুলে প্রধান শিক্ষকের নিকট বিচার প্রার্থী হন। এসময় তারা অভিযুক্ত
শিক্ষককে শাস্তি স্বরুপ জুতার মালা পড়ার জন্য দাবী জানান।
প্রধান শিক্ষক এমন মানবাধিকার বর্হিভূত কাজে সমর্থন করেন নি। তিনি
ম্যানেজিং কমিটিকে নিয়ে তদন্ত কমিটি করে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার করবেন বলে
আশ্বাস দেন। ৪ঠা সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক জরুরী একটি মিটিংয়ে মৌলভীবাজার
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গেলে তার অনুপস্থিতিতে আন্দোলনের নামে
বহিরাগতরা চালায় তান্ডব। স্কুলের বিলর্বোড ভাংচুর, শিক্ষকদের রুমে তালা
বদ্ধ করে রাখে এবং ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাস রুম থেকে বেড় হতে না চাইলে মারধর
করে জোর পুর্বক টেনে হিচড়ে বের করার চেষ্টা করে। এসময় অনেক ছাত্রীদের
হাত ধরে টানা হেঁচড়া করে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে স্কুলের ছাত্রীরা
জানিয়েছে। খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল
থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনা স্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। খেজুরীছড়া চা বাগানের রার্নার স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন,অভিযুক্ত শিক্ষককে ২০১৭ সালে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া
হয়। গত ৩রা সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রীর পিতা
অভিমান্য বোনার্জীসহ ২০-২৫ জন লোক ওই ছাত্রীকে স্কুলের খন্ডকালিন শিক্ষক
আই লাভ ইউ বলার জন্য রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদনের
অনুলিপি আমাকে দেন। আমি বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে
সিন্ধান্ত নেবোও বলে তাদেরকে জানাই। তখন অভিযুক্ত মেয়ের বাবার সাথে আগত
লোকেরা অভিযুক্ত শিক্ষককে জুতার মালা পড়ানোর দাবী করেন। এই মাবাধিকার
লংঙ্গনে কাজটি করা যাবে না বলে জানাই। সে এই স্কুল থেকে লেখাপড়া করেছিল।
খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের পরিক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়। তার কয়েক বছরের
চাকুরী জীবনে এমন খারাপ কাজে লিপ্ত রয়েছে সংবাদ শুনি নি। অতীতে তার কোন
খারাপ কাজ আমার চোঁখে পড়েনি।
এব্যাপারে রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান রার্নার স্কুল এন্ড কলেজের
শিক্ষানুরাগী সদস্য বিজয় ব্যার্নাজি জানান,আমি খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে
দেখি কিছু বর্হিরাগত লোক উশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। তাে আমার কথা ও শুনতে রাজি
নয়। তারা মাস্টারকে জুতার মালা পড়িয়ে শাস্তি দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এরপরও
তাৎক্ষনিক ভাবে তাদের চাপে সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রানতুষ সরকার, রাজঘাট
ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ, সাবেক ইউপি সদস্য সুমন তাতী, গর্ভনিং
বডির সদস্য আহসানুল হক দুলাল,খেজুরি ছড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রষিষ্ট
গোয়ালাসহ ৫ সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরের দিন ম্যানেজিং
কমিটির মাধ্যমে সিন্ধান্ত হবে বলে উপস্থিত সকলকে জানান। পর দিন স্কুলের
প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের অফিসে মিটিংয়ে চলে গেলে ছাত্রীটির পরিবারের
লোকসহ কিছু লোক স্কুলের ভিতর প্রবেশ করে শিক্ষকদেরে রুমে তালা বদ্ধ করে
উশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে বলে জানতে পারি। তখন আমি আর যাইনি। আমি
গেলে তখন হয়তো উশৃঙ্খল ছেলেদের কাছে অপমানিত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে
অভিযুক্ত শিক্ষক এত বছর ধরে চাকুরী জীবনে তিনি খারাপ কোন কাজের সাথে জড়িত
পাননি। তার খারাপ কোন আচরন চোখে পড়লে বা অভিযোগ পেলে অনেক আগেই তাকে
স্কুল থেকে অব্যাহতি দিতাম। শিক্ষকটি ছাত্র ছাত্রীর লেখাপড়ার প্রতি খুবই
আন্তরিক ছিলেন।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীব মাহমুদ মিঠুন বলেন, আমরা
এব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির জবাব দাখিলের পর
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ঘটনার দিন বর্হিরাগতরা মেয়েদের টেনে
হিচড়ে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের
সাথে এমন আচরণ হয়েছে, অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। কিন্তু ঘটনার ১মাস পেরিয়ে গেলেও গঠন করা হয়নি তদন্ত কমিটি।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ/

Discussion about this post