কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর আত্মহত্যায় উসকানি ছড়িয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় প্রধান উসকানিদাতা গাজীর উদ্দিনসহ এজাহার নামীয় তিনজনকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
কুমারখালী থানার কোর্ট (জিআরও) পুলিশ এএস আই সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘সোমবার দুপুরে এই মামলার এজাহার নামীয় ৭ ব্যক্তির মধ্যে ফারুক হোসেন, জাহিদ হোসেন, গাজির উদ্দিন, জুলকু শেখ, মাইল হোসেন ও জাবেদ আলী নামের ৬ ব্যক্তি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে ঘটনার প্রধান উসকানিদাতা গাজীর উদ্দিনসহ ৩ জনের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এছাড়া এই মামলার অপর এজাহার নামীয় ব্যক্তি জুয়েল রানা এখনও পলাতক রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ‘গত ৭ আগস্ট বিকেল ৫টায় কুমারখালীর সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল বিদ্যালয়ের শিক্ষদের বিরুদ্ধে মনগড়া ভিত্তিহীন উসকানি ছড়িয়ে গোটা এলাকার জনমনকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। পরদিন ৮ আগস্ট নিহত ওই ছাত্রীর মরদেহের জানাজায় শরিক হতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ বিশ্বাস ছাত্রীর বাড়িতে যায়। এ সময় পূর্ব থেকেই নেওয়া পরিকল্পনায় উসকানিদাতারা দেশীয় অস্ত্রসহ প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা করে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। ঘটনার সময় সেখানে সাধারণ জনগণ এতো বেশি উত্তেজিত ছিল যে সেখানে উপস্থিত পুলিশও আটকাতে পারেনি।
এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক ১২ আগস্ট ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এর আগে আত্মহত্যায় নিহত ৭ম শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া খাতুনের মা বেড়কালোয়া গ্রামের জিল্লুর রহমানের স্ত্রী মোছা. শান্তা খাতুন বাদি হয়ে মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগ এনে মশিউর রহমান লাল্টু, ওয়ালিউর রহমান অলিদ ও মাহবুবা খাতুন নামের ৩ শিক্ষক এবং শিউলী খাতুন নামের আয়ার নাম উল্লেখ করে ৯ আগস্ট কুমারখালী থানায় মামলা করেছেন।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ আজাদ আলী জানান,‘নিহত ছাত্রীর মায়ের করা আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার এজাহার নামীয় ৩ শিক্ষক ও আয়া তারা খুব সম্ভবত ঢাকা আছেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার জন্য। এই মামলার মূল অভিযোগ ‘ছাত্রীদের ভিডিও ধারণ করে তা নেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি! এ বিষয়টির প্রাথমিক তদন্তে প্রযুক্তিগত যাচাইয়ে এখনও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানালেন এই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন,‘স্থানীয় একটি মহল নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে পরবর্তীতে যারা একালায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেছে। ‘ছাত্রীদের ভিডিও নেটে ছাড়া হবে’ এমন একটা অসত্য ভুয়া তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে নিহত ওই ছাত্রীর নিকটাত্মীয় গাজির মেম্বার নিজেই জড়িত যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে। যাচাই না করে নিছক একটা ভিত্তিহীন তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সাংবাদিক ভাইদেরও দায়িত্বহীনতার পরিচয় পেয়েছি’।
উল্লেখ্য গত ৭ আগস্ট দুপুরে সুলতানপুর মাহতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া পাঁচ ছাত্রী বিদ্যালয়ের ছাদে ওঠে সিগারেট/ধূমপান করেছে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুই শিক্ষক ওই ছাত্রীদের ভর্ৎসনা করে এবং স্কুল ব্যাগ রেখে দিয়ে ছাত্রীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে গিয়ে জিনিয়া খাতুন নামের ছাত্রীটি নতুন করে আবার মা শান্তা খাতুনের কাছে বকাবকির শিকার হন। এতে লজ্জায় অপমান সইতে না পেরে ওই ছাত্রী নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে এলাকার জনগণকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলে যার শেষ পরিণতি হিসেবে ছাত্রীর জানাজায় শরীক হতে গিয়ে শিক্ষক হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৪ আগস্ট ২০২৩
![প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন](http://dailydeshtottoh.com/wp-content/plugins/wp-print/images/printer_famfamfam.gif)
Discussion about this post