২৫ লাখ টাকার মালামাল আত্মসাতের ঘটনায় ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বড় ভাই।
ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর বাংলাবাজার ঘাট এলাকায়।
গত ৯ অক্টোবর এদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের (ফৌজদারি অভিযোগ) করেন ভুক্তভোগী মো. নাছির উদ্দিন (৪৫)। নাছির উদ্দিন কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর (৫ নম্বর ওয়ার্ড) ফজল আহমদের ছেলে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদির আইনজীবী রাজিব মল্লিক বলেন, ‘২৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলার আবেদন করা হলে আদালত সেটি গ্রহণ করেন। এ মামলা তদন্তের জন্য কর্ণফুলী থানা পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন। একইসঙ্গে এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন-বাদির ছোট ভাই মো. নেছার উদ্দিন (৩২) ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর এলাকার গ্রামের মরহুম সামশুল আলমের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৩৮)।
বড় ভাইয়ের অভিযোগ তার মেসার্স নাছির ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মেশিন ও যন্ত্রপাতি বাবদ ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এতে আপন ছোট ভাই ও দোকানের জমিদার জড়িত বলে অভিযোগে জানান।
মামলার এজাহার সূত্রে বলা যায়, বাদি বড় ভাই মো. নাছির উদ্দিন ও আপন ছোট ভাই মো. নেছার উদ্দিন মিলে মেসার্স নাছির ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবসা দেখা শোনা করতেন। ২০১৯ সালে পুরাতন ব্রিজঘাট কবির হাজী মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করেন।
২০২১ সালে সেই মার্কেটের জমি বিক্রি করে দেওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে অন্য স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে ছোট ভাই নেছার প্রলুব্ধ করেন তাঁকে ব্যবসার ৫০ ভাগ সহযোগী হিসেবে নিতে। দুই ভাই মৌখিক ভাবে রাজি হয়ে ২ নম্বর বিবাদীর দোকান তিন বছরের জন্য চুক্তি করে পূনরায় ব্যবসা শুরু করেন।
এর আগে ছোট ভাই নেছার ২৫ লাখ ১৬ হাজার টাকার মালামাল বুঝে নেন বলে দাবি করেন। তিন বছর ব্যবসা চালানোর পর ২০২৩ সালের মার্চে এসে বাদিকে ১ নম্বর বিবাদী হিসাব দিতে বিরত থাকেন।
পরে জুন মাসে বাদি (বড় ভাই) ব্যবসার অন্য কাজে ঢাকায় গেলে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ফিরে এসে দোকানে গেলে তাঁকে আর দোকানে ঢুকতে দেয় না ছোট ভাই। এমনকি মেসার্স নাছির ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমস্ত মালামাল নিজের বলে দাবি করেন। এমনকি ১ নম্বর বিবাদীর সাথে দোকান মালিকের নতুন ভাবে চুক্তি হয়েছে বলে জানান।
ফলে, নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগকারীকে বের করে দিয়ে মালামাল বাবদ ২৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা ও তিন বছরের লভ্যাংশ বাবদ ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলেন অভিযোগকারী।
পরে তিনি দণ্ডবিধির৪০৬/৪২০/৫০৬/১০৯/৩৪ দন্ডবিধি ধারায় আদালতে মামলা করেন। যার সিআর মামলা নম্বর-৩৭৬/২৩ (কর্ণফুলী)। বিষয়টি তদন্তে করছেন কর্ণফুলী থানার এসআই নূরে আলম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে নাছির ও তাঁর মায়ের সাথে ঘর ভিটের জমি নিয়ে পরিষদে সালিশ হয়। আমরা সমাধান করে দিয়েছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা। লম্বা কাহিনী। সরাসরি আসলে হয়তো বুঝানো যেত।’
অভিযুক্ত ছোট ভাই মো. নেছার উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু আমরা আপন ভাই। সে জন্য কাগজপত্র করিনি। তবে উনি যে গত ২০২১ সালে আমার কাছে দোকানের সব জিনিসপত্র বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে গেছেন। সেটি আমার মা, বড় ভাই, চাচা, পাশের দোকানদার, জমিদার সবাই জানেন।’
অভিযুক্ত দোকান জমিদার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দোকান ভাড়া নেবার ৫/৬ মাস পরে নাছির ঢাকা চলে যান। ঢাকা থেকে নাছির ফোন করে বলেন-তাঁর দোকানের শেয়ার তাঁর ছোট ভাই নেছারকে বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনকি নাছির আগের চুক্তিনামা ষ্ট্যাম্পও ফেরত দিয়েছেন। তাই নতুন ভাবে নেছারকে দোকান দিছি। এটাতে সে উল্টো আমাকে মামলা দিছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার এসআই নূরে আলম বলেন, ‘ঘটনাটি আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে উনারা দু’পক্ষই চায়, একসাথে বসতে। ঘটনাস্থলে যাবো। নিরপেক্ষ স্বাক্ষীদের কথা শোনবো। তারপর আমি সেই অনুযায়ী রিপোর্ট পাঠাবো।’
//এস//

Discussion about this post