সৎ ভাইয়ের কংকাল উদ্ধার। ঘাতক দুই ভাইদের রহস্যময় মৃত্যু। তিন সহযোগী গ্রেফতার।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর গ্রামের আলমগীর হোসেন। গত বছরের ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। তিনি নিরুদ্দেশ নাকি নির্মম হত্যার শিকার তা ছিল অনুদঘাটিত।
কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এই ঘটনায় তিনজনকে আটক করে আলমগীরের হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে। ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালে খুনিদের দেখানো স্থান থেকে আলমগীরের কংকাল উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ ইমতিয়াজ কবির জানান, উদ্ধার হওয়া কংকালটির ডিএনএ টেষ্ট করার পরই জানা যাবে ওই কংকালটি আলমগীরের কিনা। তবে আটক ব্যাক্তিরা খুন করার বিষয়টি স্বিকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আলমগীরের মায়ের জমি জবর দখল করে ভোগ করে আসছিল বে-মাতা ভাই খেলান উদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার। এ নিয়ে আলমগীরের সাথে বে-মাতা ভাইদের ঝগড়া হয়।
এর জের ধরে আলমগীরকে হত্যার পরিকল্পনা করে সৎ ভাই খেলান উদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার। এরপর গত বছরের ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় আলমগীরকে কৌশলে জেলার আদিতমারী উপজেলার পশ্চিম রামদেব গ্রামে ডেকে নিয়ে যায় বে-মাতা ভাই আব্দুস সাত্তার।
সেখানে আগে হতেই উপস্থিত ছিল সাত্তারের ভায়রা (শ্যালিকার স্বামী) পাবনার রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ ড্রাইভার, পশ্চিম রামদেব গ্রামের পেশাদার চোর আশরাফ আলী ও সেকেন্দার আলী।
তারা সেখানে গল্পের ছলে আলমগীর হোসেনকে কোল্ডড্রিংকসের সাথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর তারা ঘুমে অচেতন আলমগীরকে মাটির গর্তে জীবন্ত পু়ঁতে রাখে।
দীর্ঘদিন আলমগীরের কোন খোঁজ না পেয়ে তার পরিবারের স্বজনরা কালীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়েরী করে। এই হত্যাকান্ডের দুই মাস পরে একে একে খেলান উদ্দিন ও আব্দুস সাত্তার রহস্যময় ভাবে মারা যায়। এতে ভয় পেয়ে যায় ঘাতক সাত্তারের ভায়রা ভাই পাবনার রাশেদুল ড্রাইভার। তিনি নিজেকে ওই হত্যাকান্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে নিখোঁজ আলমগীরের পরিবারকে ফোন করে। এরপর সব ঘটনা ফাঁস করে দেয়।
হত্যার শিকার আলমগীরের ভাই সাদ্দাম হোসেন জানান, হত্যার ঘটনাটি নিয়ে কয়েক মাস আগে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। থানার তৎকালীন ওসি গোলাম রসুল মামলা না নিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম রসুল অন্যত্র বদলি হওয়ার পর তিনি বাদি হয়ে এ ঘটনায় লালমনিরহাট আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি নেওয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত ভার পান কালীগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান। তিনি পাবনার রাশেদুল ড্রাইভার, আশরাফ চোর ও সেকেন্দার আলীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার ঘটনা প্রকাশ পায়।
আটককৃত রাশেদ ড্রাইভারের দেয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রামদেব গ্রামে বাঁশ ঝাড়ের মাটির গর্তে আলমগীর হোসেনের কংকাল উদ্ধার করা হয়।
নির্মম হত্যার শিকার আলমগীর হোসেন লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুলাই ২১,২০২৩//
প্রিন্ট করুন
Discussion about this post