নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরের সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে দলিল লেখক ও অফিস সহকারির অনিয়ম আর দুণীতি দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত বুধবার (২০আগস্ট) প্রায় ১০ কৌটি টাকার ৩টি দলিলের করের চালান কপি দলিলের সঙ্গে জমা না দিয়ে গোপনে দলিল লেখক ও অফিস সহকারির যোগসাজসে পুনরায় তা ভেঙ্গে প্রায় ২০লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করার পায়তারার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ায় দলিল গ্রহিতাদের ডেকে এনে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা। বর্তমানে সেই বিষয়টি উপজেলাজুড়ে টক অব দ্যা উপজেলায় পরিণত হয়েছে। উপজেলার আবাদপুকুর বাজার এলাকার গোলাম রাব্বানী তার ৪৬.৭৫শতাংশ জমির উপর নির্মাণ করা মার্কেট তিনজন ক্রেতার কাছে বিক্রি করেন।
বিক্রিকৃত প্রথম দলিলের মূল্য ৫কোটি ১৩লাখ ৬৫হাজার টাকা, দ্বিতীয় দলিলের মূল্য ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আর তৃতীয় দলিলের মূল্য ১ কোটি ৪৪লাখ ৩০হাজার টাকা। প্রথম দলিলে স্থাপনার মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৫০লাখ টাকা, দ্বিতীয় দলিলে ৫০লাখ টাকা আর তৃতীয় দলিলে ১ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি নিয়মানুসারে শতকরা ২ভাগ উৎসের কর ও ৬ভাগ স্থাপনা কর প্রদান করতে হয়। সেই দলিলের কর হিসাবে যে টাকা চালানের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ঘরে জমা হয় সেই চালান কপি দলিলে উল্লেখ্য না করে সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে দাখিল করে দলিল তিনটির কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই বিপুল অংকের টাকার দলিলের জমির শ্রেণির বাহানা দিয়ে পরবর্তিতে দলিল লেখক বেনাজুল ইসলাম ও অফিস সহকারি রবিউল ইসলামের যোগসাজসে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে করের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের পায়তারা করেন।
কিন্তু পরবর্তিতে তাদের দু’জনের মাঝে সমঝোতা না হওয়ার কারনে অফিস সহকারি নিজে জমির শ্রেণি পরিবর্তনের ভুলে চালান বেশি করা হয়েছে বাহানা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২১আগস্ট) দলিলের চালান ভেঙ্গে প্রায় ১৯লাখ ৯৭ হাজার টাকা গ্রাহকের কাছে ফেরত দিলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এমন ঘটনায় উপজেলা জুড়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আর অফিসের অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দলিল লেখক বেনাজুল ইসলাম জানান দলিলে স্থাপনা উল্লেখ করে বর্গফুট হিসেবে গোলাম রাব্বানীর মাকের্ট বিক্রি হয়েছে। দলিলে করের চালান করার সময় চালানকারী ভুল হিসেব করে উপজেলার সোনালী ব্যাংক টিটিডিসি পিএলসি শাখায় দলিলের করের চালান করে। পরবর্তিতে বিষয়টি জানতে পারার পর সেই চালান ভেঙ্গে গ্রাহকদের কাছে প্রায় ১৯লাখ ৯৭ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
চালান করে দলিল লেখার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার পরের দিন চালান ভাঙ্গা কতটুকু বৈধ সেই বিষয়ে তিনি বলেন,যেহেতু ভুল হয়েছিলো তাই সেই চালান পুনরায় ভাঙ্গা হয়েছে। তবে এমন কাজ কতটুকু বৈধ সেই বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের সহকারি রবিউল ইসলাম জানান,ওই বিক্রিত জমির শ্রেণি বিষয়ে ভুল করে কর প্রদানের চালান করা হয়। বিষয়টি জানার পর তিনি ও দলিল লেখক নিজে চালানটি ব্যাংকে গিয়ে ভেঙ্গে গ্রাহকের প্রাপ্য অর্থ ফেরত দিয়ে তিনি বাকি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘরে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি সাব-রেজিস্ট্রারকে না জানিয়ে তিনি নিজে ব্যাংকে গিয়ে গোপনে চালান ভাঙ্গার বিষয়টি কতটুকু যৌক্তিক সেই বিষয়ে কোন উত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
ওই জমির ৩ দলিল গ্রহিতার ১জন মনেয়ার হোসেন জানান, আমাদের দলিল রেজিষ্ট্রির জন্য যে টাকা চাওয়া হয়েছে আমরা তাই দিয়েছি। টাকা ফেরত না দিলে আমরা জানতেই পারতাম না আমাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার সময় দলিল লেখক টাকা প্রাপ্তী বিষয়ে ৩০০ টাকার ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের টাকা দিয়েছেন।
এই বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুক্তি আরা খানম মুঠোফোনে জানান,এই বিষয়টি তিনি জানার পর জেলা রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি অবগত করেছেন। জেলা রেজিস্ট্রারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী বৃহস্পতিবার তিনি অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।